গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কী করবেন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি জটিল সমস্যা। এ রোগে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৩৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন রুস্তাক জেনারেল হাসপাতাল, ওমান-এর স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হোসনে আরা।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : ডায়াবেটিস মানে রক্তের শর্করার আধিক্য। ডায়াবেটিস হলে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। যাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়, তাঁদের সন্তানধারণের সম্পূর্ণ সময়টা সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া যাঁদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের সন্তান গ্রহণের সময়ও সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। এসব ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে এবং প্রসব (ডেলিভারি) অবশ্যই হাসপাতালেই করতে হবে।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কী কী ধরন রয়েছে?
উত্তর : সাধারণত গর্ভাবস্থায় তিন ধরনের ডায়াবেটিস হয়। এক. রোগীর হয়তো আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং সে ইনসুলিননির্ভর। অর্থাৎ তাঁকে ইনসুলিন দিয়েই চিকিৎসা করতে হয়। তাঁর শরীরের পেনক্রিয়েজ হয়তো ইনসুলিন উৎপাদন করে না। পেনক্রিয়েজে উৎপাদিত ইনসুলিন রক্তের শর্করা মেটাবলিজমে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
দুই. এসব রোগী সাধারণত মোটা হয়। এদের হয়তো পেনক্রিয়েজের মাধ্যমে ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু রক্তে ইনসুলিনের চাহিদা মেটায় না। অর্থাৎ তাঁদের রক্তে শর্করার আধিক্য থাকে।
তিন. সাধারণত নারীটির ডায়াবেটিস থাকে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়। তাকে বলা হয় জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। এটি ডেলিভারি হলে থাকে না। তবে পরবর্তী গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া যদি সে খাবার নিয়ন্ত্রণ না করে, জীবন-যাপন পরিবর্তন না করে তাহলে ভবিষ্যতে তাঁর ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় একজন নারী কীভাবে বুঝবেন তিনি ডায়াবেটিস আক্রান্ত?
উত্তর : এদের তেমন কোনো আলাদা লক্ষণ থাকে না। সাধারণত ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলোই থাকে। ক্ষুধা বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীর ইতিহাস জানেন। এ ছাড়া আগে শিশু জন্মানোর সময় ডায়াবেটিস ছিল কি না সেটি জানা হয়। আগের শিশু চার বা সাড়ে চার কেজির ওপরে ছিল কিনা, আগে যদি স্টিলবার্থ (মৃত শিশু প্রসব) হয়, অথবা তাঁর শরীরের সূচক ত্রিশের ওপরে আছে কি না—এসব তথ্য জানা হয়। এসব ক্ষেত্রে ওজিটিটি পরীক্ষা করানো হয়। শিশু গর্ভে আসার প্রায় ২০ সপ্তাহের মধ্যে এটি করানো হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে পুনরায় করা লাগে। ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকরা কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : যদি প্রথম দুই ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে গর্ভধারণপূর্ব আলাপ করে নিতে হবে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়াবেটিস আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরে গর্ভধারণ করতে হবে। যদি ডায়াবেটিসের পরিমাণ ৬-এর নিচে হয় তবে বাচ্চা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে শিশু অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে শিশু ও মা উভয়ের ক্ষতি হবে। শিশু স্বাভাবিকের থেকে একটু বড় হয়ে জন্ম নিতে পারে। জন্মের পর শিশুর শরীরে শর্করার পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই এসব সমস্যা রোধে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সন্তানসম্ভবা মায়ের ক্ষেত্রে নিয়মিত চেকআপটি কেমন হয়?
উত্তর : তাদের ক্ষেত্রে ২৮ সপ্তাহের পর থেকে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় দিনে ছয়বার পরীক্ষা করতে হবে। সকালে খাবারের আগে এবং খাবারের পরে। দুপুরে খাবারের আগে এবং খাবারের পরে। রাতে খাবারের আগে এবং খাবারের পরে এই পরীক্ষা করতে হবে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস শুধু ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। পাশাপাশি হয়তো কিছু মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সন্তানসম্ভবা মা কীভাবে নিজেকে সাহায্য করবে? কীভাবে তাঁর পরিবার তাঁকে যত্ন নিতে পারে?
উত্তর : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডায়েট মেনে চলা উচিত। যেসব খাবার ধীরে ধীরে হজম হয়ে শর্করা বাড়ায়, সেসব খাবার খাওয়া উচিত। চিনি ক্যান্ডি, যা দ্রুত রক্তের শর্করাকে বাড়িয়ে দেয় এসব খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এসব ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : ডেলিভারির সময় কি আলাদা কোনো সতর্কতা নিতে হবে?
উত্তর : এসব রোগে শেষের দিকে শিশুটি মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সব সময় চেকআপের ভেতর থাকতে হবে। আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ৩৮ সপ্তাহের আগেই ডেলিভারি করা হয়ে থাকে।
তবে আগে প্রসব করালে শিশুটির কিছু সমস্যা হতে পারে। এটাকে মেনে নিতে হবে এবং শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।