শিশুর অন্ধত্বে প্রয়োজন সচেতনতা
অনেক বাবা-মাই শিশুর চোখে সমস্যা শুরুর সাথে সাথে সচেতন হন না। ফলে শিশুর চোখ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। আজ রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন।
প্রশ্ন : শিশুর অন্ধত্বের প্রধান কারণ কী?
উত্তর : শিশুর অন্ধত্বের জন্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে। অনেক শিশুই প্রাথমিক অবস্থায় দূরের জিনিস দেখে না কিন্তু কাছের জিনিস দেখতে পায়। এসব বাচ্চা একদম ছোট বয়স থেকে টিভি দেখতে অসুবিধা বোধ করে। টিভি দেখার সময় একেবারে টিভির কাছে চলে যায়। আবার স্কুলে গিয়ে সামনের দিকে বসতে চায়। বোর্ডের লেখা বোঝে না। এ রকম দূরের জিনিস স্পষ্ট না দেখলে বুঝতে হবে এরা মায়োপিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ ধরনের শিশু সাধারণত বাইরে খেলাধুলাও এড়িয়ে চলতে চায়।
এসব ক্ষেত্রে যদি রোগটা সময়মতো ধরা না পড়ে তবে চিকিৎসা করতে অসুবিধা হয়। যদি দুই চোখে একই পাওয়ার থাকে, তাহলে চশমা দিয়ে ঠিক করা যায়। সমস্যা গুরুতর হয় তখনই, যখন দুই চোখে দুই রকম পাওয়ার থাকে।
অর্থাৎ এক চোখে কম পাওয়ার এবং আরেক চোখে বেশি পাওয়ার থাকে। তখন যে চোখে কম পাওয়ার, সেই চোখ দিয়ে সে হয়তো চলাফেরা করে, অন্যান্য কাজ করে। কিন্তু যেটাতে বেশি পাওয়ার সেই চোখে আর দেখে না। এটিকে আমরা এবলয়োপিয়া বলি।
পরবর্তী সময় যে চোখটিতে বেশি সমস্যা হচ্ছিল সেই চোখটি অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য সময়মতো চিকিৎসা প্রয়োজন। সময়মতো চিকিৎসা করে চশমা ব্যবহার করলে বিষয়টি অনেকটা ঠিক হয়ে যায়। পরে বড় হয়ে চোখের লেজার বা লেসিক করালে সে চশমা ছাড়াই দেখতে পাবে।
আবার শিশুদের অন্ধত্বের আরেকটি কারণ টেরা চোখ। অনেক সময় পড়ার সময় শিশুর চোখ ভেতরের দিকে বেঁকে যায়। তাদের একত্রে কোনো বস্তু দেখতে অসুবিধা হতে পারে।
আমাদের শরীরে দৃষ্টিশক্তির বৃদ্ধি বা উন্নতি হয় জন্ম থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত। কাজেই আট বছর আগে যত দ্রুত সম্ভব এই ধরনের চোখের চিকিৎসা করতে হবে। চশমা দিয়ে অনেক টেরা চোখের চিকিৎসা হয়।
আবার যে চোখটায় ভালো দেখা যায়, সেই চোখটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়ে খারাপ চোখ দিয়ে দিনের কয়েক ঘণ্টা দেখতে হবে। এ ছাড়া চোখের কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো টেরা চোখ সোজা করতে কার্যকর। এতেও না কমলে সার্জারি করা হয়। এসব সার্জারিতে ভয়ের কিছু নেই। অনেকেই শিশুর টেরা চোখের চিকিৎসা না করে লুকিয়ে রেখে চোখটিকে আরো খারাপ অবস্থায় নিয়ে যায়।
এ ছাড়া অন্ধত্বের আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন : জন্মগত ছানি ও জন্মগত গ্লুকোমা। আবার কোনো নবজাতক শিশু যদি সাত বা আট মাসের সময় জন্মগ্রহণ করে এবং তাকে যদি অক্সিজেনে রাখা হয়, তবে এই অক্সিজেনের ফলে চোখের রেটিনায় সমস্যা হয়। ভয়ের কারণ নেই, এটারও অনেক ভালো চিকিৎসা হয় এখন।
এ ছাড়া চোখে ইনফেকশন হয়ে অন্ধত্ব হতে পারে। চোখে টিউমার হয়েও অন্ধত্ব হতে পারে। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবেও অন্ধত্ব হয়ে থাকে। তবে ভিটামিন এ-এর অভাবে যে অন্ধত্ব সেটি এখন অনেক কমে এসেছে। তারপরও ভিটামিনের অভাবে চোখে অন্ধত্ব হয়। সেটা দুই চোখকেই একসাথে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তাই শিশুর অন্ধত্ব রোধে চোখে সমস্যা শুরুর সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই অন্ধত্ব দূর করে ভবিষতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।