গর্ভকালীন উচ্চঝুঁকিতে করণীয়
প্রতিটি গর্ভধারণই একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। তবে কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলো উচ্চঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আজ সোমবার (০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম।
প্রশ্ন : গর্ভকালীন উচ্চঝুঁকির বিষয়টি কী?
উত্তর : যেই গর্ভধারণগুলো প্রসবের সময় বা প্রসবের পরবর্তী সময়ে মায়ের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, সেগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ গর্ভধারণ বলা হয়।
যদি কোনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী গর্ভধারণ করেন তবে সে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হলে উচ্চ রক্তচাপের জন্য, কিডনির সমস্যা থাকলেও গর্ভকালীন ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব রোগ হয়তো আগে থেকেই নারীটির জন্য ঝুঁকির কারণ ছিল এবং গর্ভধারণের পর বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন।
যদি কারো বারবার গর্ভে শিশু নষ্ট হয়ে যায়, বারবার এবরশন হয় এসব ক্ষেত্রেও গর্ভধারণ উচ্চঝুঁকিপূর্ণ।
এ ছাড়া শিশুর অবস্থা যদি গর্ভে ঠিকমতো না থাকে তাহলে সেটিও এই সমস্যার মধ্যে পড়ে। বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে আবার অনেক কম বয়সে সন্তান নিলেও এ সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : ঝুঁকিপূর্ণ নারীর বেলায় যদি পরিকল্পিত গর্ভধারণ হয় তাহলে?
উত্তর : যদি কারো ঝুঁকির মাত্রা বেশি হয় তবে অবশ্যই তাঁর পরিকল্পিত গর্ভধারণ হওয়া উচিত। এঁদের সন্তান নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অন্য কোনো ঝুঁকি আছে কি না সেটি দেখতে হবে।
প্রশ্ন : নিয়মিত পরীক্ষার বাইরে এসব নারীর বেলায় আপনারা আলাদা কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : সন্তান নেওয়ার আগে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আর কেউ যদি সে সময় না আসেন তবে অবশ্যই সন্তান আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম তিন মাসের মধ্যে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এ সময় শিশুর কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি বোঝার জন্য জেনেটিক আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়।
হার্টের সমস্যা থাকলে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে বোঝা হয় এই গর্ভধারণ মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি না।
যদি কারো ডায়াবেটিস থাকে তবে তিনি কতটা ঝুঁকিতে আছেন, সেটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এছাড়া অনেকের থেলাসেমিয়া থাকে। এসব রোগীও ঝুঁকিপূর্ণ। যদি পরিবারের কারো থাকে তবেও এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি স্বামী এবং স্ত্রীর কারো অসুখটি না হয়েও কেবল বহন করে সে ক্ষেত্রে শিশুর থেলাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রশ্ন : গর্ভধারণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : গর্ভধারণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অনেক জরুরি। অনেকে দুটি সন্তান হওয়ার পর বয়স হয়ে গেলেও আবার সন্তান নেন। তাঁদের বেলায় ডাউন সিনড্রম (জিনগত কারণে শরীরের কোনো পেশি একটু ফুলে থাকা) হতে পারে। তাহলে গর্ভের ফুল বা পানি পরীক্ষা করে গর্ভের শিশুটির ডাউন সিনড্রম আছে কি না সেটি দেখা হয়।
প্রশ্ন : প্রি-একলামসিয়া ও একলামসিয়া বিষয়টি কী?
উত্তর : এ সময় নারীদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রস্রাবের সাথে শরীরের প্রোটিন বের হয়ে যায়। এ ছাড়া লিভারে সমস্যা হতে পারে। আর প্রি একলামসিয়ার সাথে যদি খিঁচুনি হয় তখন একলামসিয়া বলা হয়। এই রোগ অনেকেই পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।
এ রোগে ঝুঁকিপূর্ণ নারীর যদি ওজনটা গর্ভধারণকালে বাড়তে না দেওয়া হয়, যদি কার্বোহাইড্রেড পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়, ভাত কমিয়ে আটার রুটি (সিদ্ধ ছাড়া) খেতে দেওয়া হয়, তাহলে প্রি একলামসিয়া অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। অর্থাৎ মায়ের ওজন বাড়বে না কিন্তু শিশুটির ওজন বাড়বে-এভাবে খাবারে পরিকল্পনা করা হয়। আর প্রি একলামসিয়ার সময় সমস্যা বুঝে আগেই প্রসব করা হয়। যেন রোগটি একলামসিয়া পর্যন্ত না গড়ায়। একলামসিয়ার কারণে মৃত্যু হতে পারে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অশিক্ষা, অসচেতনতা, আর্থিক অসচ্ছলতা বা অনীহার কারণে সময়মতো অনেক মা-ই চিকিৎসকের কাছে যান না। এর ফলে ঝুঁকিপ্রবণ মায়েরা কতটা ক্ষতিতে পড়তে পারে?
উত্তর : চিকিৎসকের কাছে না গেলে এটি নিজের জন্য ক্ষতি এবং শিশুর জন্য ক্ষতি হতে পারে। একজন মা যদি রক্তশূন্য থাকে তবে প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া গর্ভের ফুল হয়তো নিচের দিকে আছে সেই বিষয়টি নারীটি জানল না। তখনো রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
বাচ্চার ক্ষেত্রে যদি হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে, তাহলে শিশুর মস্তিষ্ক ঠিকমতো বৃদ্ধি পাবে না। সে ক্ষেত্রে বাচ্চা হলো ঠিকই কিন্তু তার বুদ্ধি কম হবে। পঙ্গু শিশু নিয়ে সারা জীবন বাবা-মাকে কাটাতে হবে। বৃদ্ধি যদি কম থাকে তখন হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকে খুশি হয় ছোট বাচ্চা হয়েছে এই ভেবে। কিন্তু এতে আসলে শিশুটির পরবর্তী জীবনে সমস্যা হয়ে যায়।