অফিসে প্রেম!
কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের উঠতি দিনগুলো কেটে গেল ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টার্ম পেপার আর সেমিস্টার ফাইনালের তাড়ায়। তারপর বেরুতে না বেরুতেই চাকরি। কাজকর্মে ব্যস্ত সময় পার করতে করতেই একটু দীর্ঘশ্বাস, আহা, হাত ধরার মানুষটাকে তো খোঁজাই হলো না, তাই পাওয়াও হলো না! ‘আমি কোথায় পাব তারে’ হাপিত্যেশ করে কেন দিন পার করা?
কাছের মানুষটি হয়তো আপনার পাশে বসেই কাজ করছেন! সহকর্মী হতেই পারেন আজীবনের সঙ্গী। এনডিটিভির খবর থেকেও জানা গেল এ কেবল বেশুমারি কল্পনা নয়, রীতিমতো জরিপে মিলেছে এর সত্যতা!
ভারতের একটি অনলাইনভিত্তিক জবসাইট ক্যারিয়ারবিল্ডারডটইন। এর বার্ষিক জরিপে উঠে এসেছে দাপ্তরিক প্রেম ও এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পরিসংখ্যান । দুদিন বাদে ভালোবাসা দিবস সামনে রেখেই এমন জরিপ। ফলাফলে চোখ বুলিয়ে সমীকরণ এমন যে, ৩৬ শতাংশ ভারতীয় কর্মজীবীরা একই অফিসে খুঁজে পাচ্ছেন তাদের প্রেমিক বা প্রেমিকাকে। আর এর সাফল্যের হার শুনলে আরো মজা পাবেন! ৩৭ শতাংশ একই দপ্তরের ভালোবাসার যুগল বাসা বাঁধছেন একসাথে। এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে পুরো দেশে, উদ্দেশ্যভিত্তিক নমুনায়নের মাধ্যমে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার পূর্ণকালীন কর্মজীবী এতে অংশ নেন।
৫৬ শতাংশের মধ্যে জানিয়েছেন, অফিসে কাজ করতে গিয়ে তারা কোনো না কোনো সহকর্মীকে দেখে ‘প্রেমবিদ্ধ’ হয়েছেন! কেউ কেউ আবার অফিস রোম্যান্সকে ক্যারিয়ারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। যাদের দপ্তরঘটিত প্রণয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের ৫৫ শতাংশরই সঙ্গী তাদের বস! ৬৮ শতাংশ কর্মজীবী জানিয়েছেন যে তারা পদমর্যাদায় উপরদিকের কারও সাথেই প্রেম করেছেন। অন্যদিকে, ৩৪ শতাংশ তাদের সমান পদস্থ সহকর্মীর সাথে প্রেম করেছেন এবং বিয়েও করেছেন।
অফিসের প্রেম ভালোবাসাকে গোপন রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন অনেকে। হতেই হবে, ফেসবুক আর ইন্টারনেটের যুগ বলে কথা! ৭১ শতাংশ চাকুরেরা বলেছেন, তাঁদের সম্পর্কটা গোপন রাখতে হয়েছে, আবার ৭২ শতাংশ ডেটিংয়ে গিয়ে অন্য কোনো সহকর্মীর কাছে হাতেনাতে ধরাও খেয়েছেন!
দপ্তরে ভালোবাসা খুঁজবেন নাকি ভালোবাসা আপনা-আপনি আপনার ওপরে উড়ে এসে জুড়ে বসবে, সে চিন্তা একটু পরে করুন। অফিস জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসতেই পারে, তবে সে জন্য কিছু বিষয় মাথায় রেখে দিন। এগুলোকে অফিস রোম্যান্সের টিপসও মনে করতে পারেন!
১. কোম্পানির নীতিমালায় লক্ষ রাখুন
কর্মক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি আছে বহু অফিসেই। সুতরাং, ‘পেশাদারি’ সম্পর্ককে ‘ব্যক্তিগত’ সম্পর্কে বদলে দেওয়ার আগে নজর রাখুন, অনুমতি আছে কী?
২. ধীরে বন্ধু ধীরে!
কিছু সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়, আবার কিছু সম্পর্কের পরিণতি হয় খুব খারাপ। অফিস রোম্যান্স ভেস্তে যাওয়ায় চাকরিও ছাড়তে হয় অনেককে। সুতরাং, কাউকে পছন্দ হলে লাভ-ক্ষতির পাল্লা মিলিয়ে দেখতে হবে। একইসাথে, প্রথমেই বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে মানুষটাকে।
৩. জীবন যেখানে যেমন!
পেশাদার জীবনের সাথে ব্যক্তিগত জীবনকে ভুলেও গুলিয়ে ফেলবেন না। প্রণয়সঙ্গীর প্রতি আপনার ভালোবাসার বহর ভুলেও কর্মস্থলে দেখাবেন না। এতে কর্মজীবনে বাজে প্রভাব তো পড়বেই, সাথে আপনার অন্যান্য সহকর্মীরাও দিনশেষে ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখবে না- নিশ্চিত থাকতে পারেন।
৪. ফেসবুক সাবধান!
সামাজিক মাধ্যমে যখন যেটাই পোস্ট করুন, বুঝেসুঝে করবেন! একখানা মামুলি স্ট্যাটাসের জন্য একদম গুঁড়িয়ে যেতে পারে সম্পর্ক; কিংবা এলোমেলো হয়ে যেতে পারে আপনার কর্মজীবন।
৫. ফায়দা নেবেন না
ভালোবাসার বিষয়টি ভালোবাসার মধ্যেই রাখুন। ফায়দা, সুবিধা বা টাকা-পয়সার হিসাবনিকাশ মিলিয়ে সম্পর্কে জড়ানো থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। এমন সম্পর্ক যতটা দ্রুত এবং দারুণভাবে তৈরি হবে, তারচেয়েও দ্রুত এবং বাজেভাবে শেষও হয়ে যেতে পারে কিন্তু!