এলার্জিজনিত সমস্যায় করণীয়
শীত যাই যাই করছে। ঋতু বদলের এই সময়ে হাঁচি, কাশি, এলার্জিজনিত রোগ ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। এলার্জিজনিত সমস্যার কারণ কী- এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন বারডেম হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ডাক্তার রেজা বিন জায়েদ। এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪৪ পর্বে এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন :এই সময়ে হাঁচি, কাশি, এলার্জিজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যায় এর কারণ কী?
উত্তর : এ সময় অনেক দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়ায় দূষণ শুরু হয়। কারণ শীতের প্রায় শেষে বাতাসে অনেক ধুলাবালি থাকে। এই ধুলাবালির সঙ্গে এলার্জেন মিশে থাকে। এই সময় এলার্জি হওয়ার বিভিন্ন উপাদান আমাদের শ্বাসনালির ভেতর ঢুকে যায় বা আমাদের ত্বকের ওপর বসে পড়ে। মোটকথা, বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার ফলে এলার্জির প্রকোপ বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : হাঁচি, কাশির সঙ্গে এলার্জির এই সম্পর্ক কেন? কীভাবে ত্বকে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়?
উত্তর : আসলে হাঁচি, কাশি উপসর্গ মাত্র। এসব কিছুই এলার্জি সংক্রান্ত রোগ। আবার সব হাঁচি যে এলার্জি সংক্রান্ত তা-ও নয়। এ সময় সকালের দিকে অনেক হাঁচি হতে পারে। নাক দিয়ে হঠাৎ করে পানি পড়ে এবং কাশি হয়ে থাকে। অনেকের ত্বকে অযথাই চুলকানি শুরু হয়। এগুলো সবকিছুর উৎস একই, কেবল উপসর্গ ভিন্ন।
এই এলার্জি যখন নাকে যায় তখন নাকের ঝিল্লির ওপর বসে প্রতিক্রিয়া শুরু করে তখন হাঁচি শুরু হয়। যখন গলায় যায় তখন কাশি হয় এবং যখন ত্বকে এলার্জি হয় তখন এটি চুলকানি আকারে প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন :এলার্জেন আসলে কোন কোন ক্ষেত্রের ওপর ( ফেক্টরের) নির্ভর করে। সবার ক্ষেত্রে তো একই রকম হয় না। সেটি কীভাবে বোঝা যাবে?
উত্তর : অতিসংবেদনশীলতা এলার্জির মূল কারণ। তবে এটি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন রকম হয়। তবে এলার্জি শুধু যে এই সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভর করে তা নয়।
এ ছাড়া আরো কারণ আছে। যেমন : আবহাওয়ায় কত পরিমাণ এলার্জির উপাদানগুলো ছড়িয়ে আছে তার ওপরও এই সমস্যা নির্ভর করে। আবহাওয়ায় এলার্জির উপাদান যত বাড়তে থাকে এই রোগের প্রকোপও তত বাড়তে থাকে।একটি শহরে যত বেশি দূষণ হবে মানুষ তত এলার্জির সমস্যায় ভুগবে।
তা ছাড়া আমাদের অনেক খাদ্যের উপাদানের মধ্যেও এলার্জেন আছে। অনেক খাদ্যের উপাদান এই এলার্জির জন্য দায়ী। তবে এটি ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
প্রশ্ন :এলার্জিজনিত কারণে ত্বকের সমস্যা হলে সেটি বোঝার উপায় কী?
উত্তর : এলার্জির কারণে ত্বকের সমস্যা হলে হঠাৎ ত্বক লাল চাকার মতো ফুলে উঠে। এর সাথে অতিরিক্ত চুলকানি হয়। অনেক জায়গায় একত্রে হতে পারে বা নিদির্ষ্ট জায়গায়ও হতে পারে। তবে এই সমস্যা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা চলে যায়। ২৪ ঘণ্টার পর আবার ফিরে এসে ভিন্ন জায়গায় চুলকানি হয়।
বেশি কাশি হলে গলা বসে যেতে পারে। কাশতে কাশতে অনেক সময় ফেরিনজাইটিস হয়ে যায়। ফেরিনজাইটিস হলে গলা ব্যথার সমস্যা হয়।
প্রশ্ন : অনেক সময় ঠাণ্ডার কারণে এলার্জি, ধুলার কারণে এলার্জি এই বিষয়গুলো শুনে থাকি। এই বিষয়গুলো কী? হাঁচি,কাশির সঙ্গে এগুলোর কী সম্পর্ক রয়েছে?
উত্তর : এতক্ষণ যা আলোচনা হচ্ছিল সেগুলোর মধ্যে ধুলাবালি, বায়ু দূষণ সেগুলো সবই ছিল। কিন্তু আরো কিছু এলার্জি যেমন ঠাণ্ডা জনিত এলার্জি আছে, যেগুলো শীত হয় বা শীতের পর পর হয়। এ সময় শীত চলে গেছে ভেবে মানুষ অতটা গরম কাপড় পরে না। ফলে ঠাণ্ডা জনিত এলার্জি হয়।
অনেক ক্ষেত্রে আবার গরমের সময় গরম জনিত এলার্জি দেখা যায়। অতিরিক্ত গরম হলে ঘাম হয় শরীরে। ঘাম যদি তাড়াতাড়ি না শুকায় তাহলে একই ধরনের এলার্জি হয়। এ ক্ষেত্রেও রোগের উপসর্গ একই থাকে।
প্রশ্ন : খাবার থেকে অনেক সময় এলার্জি হয়। কোন ধরনের খাবারে এ ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : অনেকেই ভাবে খাবারের এলার্জি কেবল নির্দিষ্ট খাবারেই হয়। সাধারণত ভাবা হয়, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ- এসব খাবার খেলে এলার্জি হয়। তবে এগুলো সঠিক নয়। ব্যক্তি বিশেষে নিদির্ষ্ট একটি খাবারে এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে।এতগুলো উপাদানের ফলে সাধারণত একজন মানুষের এলার্জির সমস্যা হয় না।
পেশাগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ইলিশ মাছ সরাসরি এলার্জির জন্য দায়ী নয়। তবে চিংড়ি মাছে এলার্জি হতে পারে। খোসা জাতীয় মাছ যেটাকে ইংরেজিতে শেল ফিস বলে এসবে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দুধে এলার্জি থাকে। বিশেষ করে গরুর দুধে। যখন গরুকে কোনো কারণে চিকিৎসা দিতে হয় তখন যে দুধ পাওয়া যায় সেখান থেকে এলার্জি হতে পারে। চিকিৎসা বলতে বোঝানো হচ্ছে, যদি গরুটিকে পেনিসিলন জাতীয় এন্টি বায়োটিক দিতে হয় তখন এটির প্রভাব দুধে চলে আসে। যাদের এলার্জি আছে তারা ওই দুধ খেলে তার এলার্জির সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া লাল জাতীয় সবজি খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। যেমন : গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো- এ ধরনের রঙিন সবজিতে এলার্জির সমস্যা থাকে। তাই ব্যক্তি বিশেষে কোন খাবারে এলার্জির সমস্যা হচ্ছে সেটি জানতে হবে এবং সেভাবেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে।