কেন হয় এসথেটিক সার্জারি?
এসথেটিক সার্জারি মানে সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা সৌন্দর্য রক্ষার সার্জারি। প্রকৃতগতভাবে সৌন্দর্য যে রকম থাকা উচিত ছিল, সে রকম যদি না হয় অথবা যে রকম ছিল সেটা যদি ব্যাহত হয় তখন চিকিৎসকরা অপারেশনের মাধ্যমে এসথেটিক সার্জারি করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করেন। এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৫২তম পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সিটি হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল বারী।
প্রশ্ন : এই এসথেটিক সার্জারি একজন মানুষের শরীরে কখন প্রয়োজন হয়? সাধারণত আপনারা কী সার্জারি করে থাকেন?
উত্তর : এসথেটিক সার্জারিকে সাধারণ মানুষ আরেকভাবে বোঝে কসমেটিক সার্জারি। এই শব্দটি বেশি পরিচিত। আমরাও রোগীদের বোঝানোর জন্য এই শব্দটি ব্যব্হার করি।
আমরা বলি, প্লাস্টিক সার্জারি একটি গাছ। তার দুটি শাখা রয়েছে। একটি রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি। অপরটি এসথেটিক সার্জারি।
শরীরের বিভিন্ন অংশের সংস্কার করাকে বলা হয় এসথেটিক সার্জারি। শরীরের সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। তবে নাকটি হয়তো বোঁচা। পেটে একটু চর্বি জমে গেছে। মুখে হয়তো ব্রণের দাগ হয়েছে, ফলে অস্বস্তি লাগছে। মাথার চুল পড়ে গেলে অনেকে চুল লাগাতে চান। এই সার্জারিগুলো এসথেটিক সার্জারি। এটি না হলে মানুষের জীবন থেমে থাকে না, জীবন চলবে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস বাড়ানো বা ভালো লাগার জন্য ব্যক্তি এই সার্জারি করিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে এসথেটিক সার্জারির অংশ হিসেবে সাধারণত কী কী সার্জারি করা হয়?
উত্তর : সবচেয়ে প্রচলিত সার্জারি হলো নাকের সার্জারি। নাকটা বোঁচা, এবং সামনের অংশ একটু মোটা। এটাকে ব্যক্তি ঠিক করতে চাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি।
দ্বিতীয়ত যেই সমস্যা নিয়ে আসে সেটি হলো, পেট মোটা। সাধারণত মধ্য বয়সে (৪০ থেকে ৫০) পেটটা হয়তো মোটা হয়ে গেছে। পেটে প্রচুর চর্বি জমলে অনেকে সার্জারি করাতে আসেন।
আরেক ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন তা হচ্ছে, চুল পাতলা। সাধারণত তরুণদের মধ্যে বিয়ে করার আগে চুল ঠিক করার প্রবণতা দেখা যায়।
যাদের বয়স হয়ে গেছে ৫০-এর ওপরে, তাদের হয়তো গলায় ভাঁজ পড়েছে, চোখের নিচে চর্বি জমেছে, ডবল চিন হয়েছে তখন এই সার্জারি করান।
আবার কানে হয়তো জন্ম থেকে সমস্যা, এটা ঠিক করতে এই সার্জারি করান। এই অপারেশনগুলো এখন বাংলাদেশে খুবই প্রচলিত।
এ ছাড়া জন্ম থেকে হয়তো স্তন ছোট, সেটি নারীটি হয়তো পছন্দ করছেন না। আবার হয়তো কোনো রোগের কারণে স্তন বেশি বড় হয়ে গেছে। তখন সার্জারি করে ঠিক করাতে চায়। এই সার্জারিটিও আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয় হচ্ছে।
প্রশ্ন : মুখের (ফেসিয়াল) এসথেটিক সার্জারিতে কাটাছেঁড়ার বিষয় কতখানি আছে এবং এটিতে দাগ থাকে কি না?
উত্তর : যখন আপনি সার্জারি করবেন, তখন কিন্তু কাটাছেঁড়া হবেই। চিকিৎসকরা প্রথমে একটি রোগী পেলে পরিকল্পনা করেন। তাকে কী অপারেশন করা হবে এবং কীভাবে করা হবে। যেন কাটাছেঁড়ার দাগ না দেখা যায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, নাকের অপারেশনে নাকের ভেতর দিয়ে কেটে চামড়াটাকে তুলে দেওয়া হয়। নাকের ভেতর দিকে সেলাই দিয়ে দিই। এতে দাগ থাকবে কিন্তু দেখা যাবে না। চোখের নিচে চর্বির ক্ষেত্রে এমনভাবে অপারেশন করা হয় যেন পরবর্তীকালে এই দাগটা আর দেখা না যায়। প্রথম ১০ থেকে ১৫ দিনে হয়তো দাগ দেখা যাবে। তারপর মিলিয়ে যাবে।
এ ছাড়া বয়সে বলিরেখার ছাপ পড়ে গেছে, বাড়তি চিবুক (ডবল চিন) হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি চামড়াটা কেটে বা চর্বি থাকলে চর্বি ফেলে দিয়ে চামড়াকে পুনর্গঠন করা হয়। চিবুকের ক্ষেত্রে মেশিন দিয়ে ছোট্ট ছিদ্র করে চর্বিগুলো বের করে দিই। এতে দাগ থাকে কিন্তু ওষুধ ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে সেটি মিলিয়ে যায়।
প্রশ্ন : ডাবল চিন বা বাড়তি চিবুক হলে কি শুধু লাইপোসেকশন করে ভালো হয় নাকি সার্জারি করে আবার বাড়তি যে চামড়া সেটিকে ফেলে দেওয়া হয়?
উত্তর : লাইপোসেকশন করে চিবুকের মধ্যে একটি ব্যান্ডের মতো পরিয়ে দিই। ব্যান্ড পরে থাকলে চামড়াটা লেগে থাকে, ঝুলে পড়ে না। দুই মাসের মতো পরতে বলা হয়। গোসলের সময় বা বাইরে কোনো জায়গায় গেলে খুলবে নয়তো পরে থাকবে। কিছুদিন পর চামড়াটা ধীরে ধীরে আগের পর্যায়ে চলে আসে।
প্রশ্ন : লাইপোসেকশন পেটের বেলায় আপনারা কীভাবে করেন?
উত্তর : পেটের বেলায় আমরা ছোট ছোট তিনটি ছিদ্র করি। এরপর ক্যানোলা ঢুকিয়ে দিই। এটা হলো কনভেনশনাল লাইপোসেকশন। যেটাতে ক্যানোলা ঢুকিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত চর্বিটাকে আমরা বাইরে নিয়ে আসি। আরেকটি বিষয় আছে, লেজার লাইপোলাইসিস। এতে একটি চিকন তারের মতো পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। লেজারগুলো পেটের ভেতরে গিয়ে চর্বিটাকে গলিয়ে দেয়। চর্বিটাকে বের করে নিয়ে আসে না। তবে এটি সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এই চর্বি রক্তে চলে যায়। তখন এটি হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের মধ্যে আটকে যেতে পারে। এর ফলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হতে পারে।
যদি আপনি কনভেনসুয়াল লাইপোসেকশন করেন, এটি আশির দশকের আগে থেকে চলে আসছে এবং এখন পর্যন্ত চলছে। এটি বন্ধ হচ্ছে না। মাঝখানে অনেক কিছু এসেছিল, তবে আবার মানুষ এখানে ফিরে গেছে। কারণ এখানে ছিদ্র করে চর্বিটাকে বের করা হয়। চর্বিকে গলিয়ে দেওয়া হয় না। ছোট্ট একটি ছিদ্র করা হয়। এরপর সাতদিন পরে কেটে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : একটা মানুষের কি জীবনযাপনের ফলেই চর্বি কমে যেতে পারে নাকি সার্জারি করতে হয়?
উত্তর : চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য হলো ব্যক্তিটির উচ্চতা এবং ওজনের সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটি দেখা। ওভারওয়েট এবং অবেসিটির মধ্যে পার্থক্য আছে। যদি সাধারণ ওভার ওয়েট হয় তাহলে বলি ডায়েট করতে হবে। তখন সার্জারি করার কোনো দরকার হয় না। শুধু জীবনযাপনের পরিবর্তন করলেই হবে। কিন্তু যদি অবেসিটি হয় বা শরীরের বিভিন্ন অংশে চর্বি জমে যায়, তাহলে লাইপোসেকশন করে চর্বি ফেলে দিতে বলা হয়। তবে যদি চামড়াটা চর্বি জমতে জমতে বেশি ঝুলে পড়ে- এ ক্ষেত্রে লাইপোসকেশনে হবে না। তখন এবডিমিনো প্লাস্টি করা হয়।
চিকিৎসা করা হলেও জীবনযাপনের পরিবর্তন না করলে সে রোগীটি আবারও মুটিয়ে যেতে পারে। তাই জীবনযাপনের পরিবর্তন এখানে খুব জরুরি।