মুখমণ্ডলে ব্যথায় করণীয়
মুখমণ্ডলে স্নায়ুর সমস্যার কারণে অনেক সময় তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথায় অনেক সময় ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে। আজ রবিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখ) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৫৪ পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জন এবং অ্যাপোলো হাসপাতালের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা।
প্রশ্ন : আমরা জানি, মুখমণ্ডলের এলাকায় মস্তিস্ক থেকে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ু বা নার্ভ আসে, আমরা যে স্পর্শ করছি, হাসছি, নড়াচড়া করছি সবকিছুই নার্ভ এসে নিয়ন্ত্রণ করছে। নার্ভের সমস্যার কারণে অনেক সময় তীব্র ব্যথা হয়। সাধারণত কোন কোন নার্ভের কী ধরনের সমস্যা হয়? এই ব্যথায় কী ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : আমরা নার্ভকে দুইভাগে ভাগ করে থাকি, সেন্সোরি নার্ভ ও মটো নার্ভ। তিনটি শাখা থাকে। এই নার্ভে যদি কোনো সমস্যা হয়, যেমন : পুষ্টিহীনতা বা নার্ভের উপর কোনো কারণে যদি চাপ হয় সেক্ষেত্রে প্রচণ্ড নিউরাল ব্যথা হয়, যেটাকে আমরা বলি ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া। এ ক্ষেত্রে রোগী সাধারণত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলে তার হঠাৎ হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। ব্যথা বিদ্যুতের মতো মনে হয়, কয়েক সেকেন্ড থাকে বা আধা মিনিট থাকে, আসে এবং চলে যায়। রোগীরা প্রায়ই বলে সে শেভ করতে পারছে না। অজু করতে পারছে না। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করতে পারছে না।
অনেকে মনে করে বা দাঁতের চিকিৎসকরা মনে করে এটি দাঁতের সমস্যা কি না। দেখা যায়, চিকিৎসক হয়তো একটার পর একটা দাঁত ফেলে দিচ্ছে। রোগীও বলছে আমরা দাঁতের ব্যথা দাঁত ফেলে দেন। কিন্তু দাঁত ফেলে দেওয়ার পরও ব্যথাটি কমে না। মূলত এটি হচ্ছে স্নায়ুর সমস্যা।
প্রশ্ন : আমরা জানি, যেসব ব্যথার উৎপত্তি মস্তিস্ক থেকে হয় এ রকম ব্যথার ধরন কেমন? একজন মানুষের কোন কোন জায়গায় ব্যথাটি হয়?
উত্তর : মূলত আমরা দেখেছি ম্যান্ডিবুলার এবং ম্যাক্সিলারি নার্ভে এই ব্যথা থাকে। ম্যান্ডিবুলার শাখায় নিচের চোয়াল থেকে সামনের ঠোঁট পর্যন্ত চলে আসে, এখানে মেন্টাল নার্ভ থাকে। প্রথম দিকে দেখা যায়, প্রায় রোগী বলে সে ঠোঁটের আশপাশের জায়গায় হাত দিতে পারছে না। ঠাণ্ডা পানি লাগলেই প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। ত্বকও খুব স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে এটি উপরের চোয়ালের দিকে চলে আসে এবং এটি কপাল পর্যন্ত চলে যায়। প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
যে নার্ভে ব্যথা হবে তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তীক্ষ্ণ ব্যথা হবে। যেটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড আসে যায়। নির্দিষ্ট একটা এলাকা থেকে ব্যথাটা শুরু হবে। এর বিভিন্ন কারণ থাকে। কোনো কিছুতে ঠাণ্ডা লাগলে, শেভ করার সময় এবং ওজু করার সময়- ইত্যাদি কারণে ব্যথা হয়।
প্রশ্ন : মুখমণ্ডলের এই এলাকায় তো আরো অনেক কারণে ব্যথা হয়। বিশেষ করে দাঁতের ব্যথা বা সাইকোসোমাটিক ব্যথা- ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ব্যথা হয়। কী করে আপনারা নির্ধারণ করেন স্নায়ুর কারণেই রোগীর ব্যথা হচ্ছে?
উত্তর : স্নায়ুর ব্যথা হলে রোগীর ইতিহাস জানা জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্নায়ুকে অবশ করে দিই এ সময় যদি রোগীর কোনো ব্যথা না থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি নার্ভের রোগ। নিউরোলজিক ব্যথার সঙ্গে খাবারের কোনো সম্পর্ক থাকে না। এই জাতীয় ব্যথা মাত্র কয়েক সেকেন্ড ধরে আসবে, যাবে। দাঁতের ব্যথার ক্ষেত্রে হয়তো আক্কেল মাড়ি উঠতে পারছে না। সেই রকম একটি পকেট ফর্ম হয়ে ব্যথা হতে পারে। টনসিল থেকেও প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। তবে এসব ব্যথার সঙ্গে নিউরোলজিক ব্যথার পাথর্ক্য করার উপায় হলো নার্ভকে ব্লক করে দেওয়া।
প্রশ্ন : আপনি বললেন, রোগীর তীব্র ব্যথা হয়। এটি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
উত্তর : রোগ নির্ণয়ের পর তাকে নিশ্চিত করা এটি এমন একটি রোগ যেটি স্নায়ুর কারণে হয়েছে। যেটি হয়তো সহজে সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন দেওয়া হয়। এতে যত দিন চলা যায় ভালো। তবে একটা পর্যায়ে দেখা যেতে পারে,ওষুধেও হয়তো কাজ করছে না। তখন আমরা স্নায়ু ব্লক করে দিই। একটা কিছু ক্যামিক্যাল বা সলিউশন দিয়ে ব্লক করে দিই। যেমন : ফিনল ব্লক, এলকোহল ব্লক দিয়ে ওই স্নায়ুকে যদি ব্লক করে দেওয়া হয় এতে অন্তত পক্ষে ব্যথা এক-দুই বছর বন্ধ থাকবে। এতেও যদি না হয় স্নায়ু বা নার্ভটাকে কেটে বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যথার কারণ যদি মধ্যবর্তী হয় তাহলে রিকমপেশন করে ব্যথা দূর করতে পারি।
প্রশ্ন : একটি প্রশ্ন করব যেটি তরুণ দন্ত চিকিৎসকদের জন্য । আপনি শুরুতেই বলেছিলেন, অনেক রোগী আসে রেফার হয়ে, যাদের দাঁত ফেলে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ব্যথা যাচ্ছে না। চিকিৎসক হয়তো বুঝতে পারেন না। তাদের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী? এ রকম নিউরোলজিক ব্যথা হলে করণীয় কী?
উত্তর : নতুন চিকিৎসকদের জন্য বলব, মুখের এই অংশের কোনো ব্যথা হলে সব যে দাঁতের ব্যথা হবে তা কিন্তু নয়। সেজন্য আমরা যদি মুখের গঠন ভালোভাবে চিন্তা করি, রোগীর ইতিহাসটা জানি এবং ব্যথার বৈশিষ্ট্যগুলো যদি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করি এবং পরীক্ষা করি তাহলে সমস্যাটি বোঝা সম্ভব। এভাবে দাঁত, স্নায়ু- এসবের ৯৯ শতাংশ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। আর যদি বুঝতে না পারি সেটি খুব দুর্ভাগ্যজনক।
প্রশ্ন : সাইনোসাইটিসের কারণে কিংবা ম্যাক্সিলারি সাইনাসের ইনফেকশনের কারণে উপরের চোয়ালের দাঁত বা এই অংশে অনেক সময় ব্যথা হয় বলে রোগীরা অভিযোগ করে। সে ক্ষেত্রে এটি কি ট্রাইজেমিনাল নিউরোলজিয়া এক্সিলারি পার্ট বা ইনফোবিটাল শাখার কারণে নাকি সাইনাসের সমস্যার কারণে হচ্ছে সেটি নির্ধারণ করার উপায় কী?
উত্তর : সাইনোসাইটিস হলে সাধারণত রোগী বলে তার প্রায়ই ঠাণ্ডা লাগে। একটি এলার্জি ভাব থাকে, চোখের নিচের অংশে ব্যথা লাগে, অনেকে বলতে পারে দাঁতেও ভারী লাগছে, অবশ লাগে, একটা ভোতা ব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস নিলে এবং এক্স-রে করলে বোঝা যাবে। এক্সরে করলে দেখা যাবে পানি জমা হয়েছে। যেটা নিউরোলজিক ব্যথার ক্ষেত্রে দেখা যাবে না। সেভাবে নির্ধারণ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।