পোস্ট মেনোপোজাল রক্তপাতে কারণ, করণীয়
নারী শরীরে নির্দিষ্ট বয়সের পরে মেনোপোজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি আবারও কোনো কারণে রক্তপাত হয় তাকে পোস্ট মেনোপোজাল ব্লিডিং বলা হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি এবং খাওয়া-দাওয়ার পরিবর্তন আনলে অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়।
আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৫৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি এবং ধাত্রী বিদ্যা বিভাগের পরামর্শক ডা. খালেদা ইয়াসমিন মির্জা।
প্রশ্ন : মেনোপোজ বিষয়টি কী? এটি কোন বয়সে হয়ে থাকে?
উত্তর : মেনোপোজ বলতে আমরা বুঝি মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমরা জানি, একজন নারীর প্রতি মাসে মাসিক হয়। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে মাসিক যখন একটানা এক বছর না হয়, তখন সেটিকে মেনোপোজ বলি। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫২ বছরের ভেতর মেনোপোজ হয়। এই সময় মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন : মেনোপোজ হওয়ার সময় কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়?
উত্তর : মেনোপোজ হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে নারী শরীরে কিছু সমস্যা হয়। যেমন : সারাক্ষণ মাথা গরম থাকে। হাত-পা জ্বালাপোড়া করা। বেশি পানি পিপাসা হওয়া। কখনো হয় তো গরম সহ্য করতে পারছে না। আবার কখনো ঠাণ্ডা সহ্য হচ্ছে না। একটু বিরক্তিভাব থাকে সবসময়। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। ঘুমের সমস্যা হয়। যৌনাঙ্গে শুষ্কতা হতে পারে। অনেকে সঙ্গমের সময় ব্যথা পায়। সাধারণত এই ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন : মনোপোজের প্রথম পর্যায়ে যখন মাসিক বন্ধ হয়, সেই সময় যেই লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেগুলোর চিকিৎসা কী?
উত্তর : পোস্ট মেনোপোজাল লক্ষণে খুব যে একটা ভালো চিকিৎসা রয়েছে বিষয়টি তা নয়।আবার সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেবে এটিও ঠিক নয়। কারো খুব সাধারণ সমস্যা হয়। খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম করা, পানি বেশি খাওয়া।
এই সমস্যাগুলো বেশি দিন স্থায়ী হয় না। যাদের বেলায় বেশি হয় তাদেরই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন: পোস্ট মেনোপোজাল রক্তপাত কাদের বেলায় হয় এবং এটি কতটা গুরুতর?
উত্তর : মাসিক এক বছর বন্ধ থাকার পর যদি কারো রক্তপাত হয় তখন তাকে আমরা পোস্ট মেনোপোজাল রক্তপাত বলি। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটি গুরুত্বের সাথে সবাইকে বিবেচনা করতে হবে।
পোস্ট মেনোপোজাল রক্তপাতের অনেক কারণ আছে। কিছু সাধারণ কারণ আছে। যেমন : কেউ যদি এইচআরটি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি মাঝে মাঝে নেয় সেই ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যা হতে পারে কারো যদি সার্ভিক্স এ পলিপ থাকে। ইউট্রাসে এনডোমেট্রাল পলিপ থাকে, যৌনাঙ্গে আলসার থাকে সে ক্ষেত্র রক্তপাত হতে পারে।
তবে যেই ক্ষেত্রে আমরা ভয় পাই এনডোমেট্রিয়াল ক্যানসার। এই সমস্যা হলেও মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও রক্তপাত হতে পারে। এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ এই ক্যানসারের।
এ জন্য মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও যদি ক্যানসার হয় সেই ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে এই ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য।
প্রশ্ন : যেসব কারণ বলছেন এর মধ্যে এনডোমেট্রিয়াল ক্যানসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সে ক্ষেত্রে ক্যানসার হোক বা না হোক বিষয়টি আপনারা কিভাবে নির্ণয় করে থাকেন?
উত্তর : প্রথমতো রোগীর ইতিহাস নেই, সে কোনো ধরনের ওষুধ খাচ্ছে কি না জানি, বিভিন্ন পরীক্ষা করি। যদি কারো সার্ভিক্সে পলিপ থাকে সেটি তো পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে দেখি তার এনডোমেট্রিয়ামটি পুরো হয়ে গেছে কি না। এনডোমেট্রিয়াল বায়োপসি করি। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি ক্যানসার আছে কি না। বায়োপসি না করার আগে বোঝা যাবে না যে রক্তপাত সাধারণ সমস্যার জন্য হচ্ছে বা জটিল সমস্যার জন্য হচ্ছে।
প্রশ্ন : পোস্ট মেনোমোপাজাল সমস্যার কারণে অন্যতম একটি লক্ষণ হয়, সে বলে তার সারা শরীর জ্বালাপোড়া করছে। মুখে জ্বালা পোড়া করে , যা কিছু খেতে চায় ঝাল লাগে, খেতে পারে না। মাথা গরম থাকে এবং অস্থির লাগে। এই বিষয়গুলো কেন হয় এবং করণীয় কী?
উত্তর : শরীরের একটি হরমোন বেড়ে যায়। যার ফলে এধরনের সমস্যা হয়। এই অবস্থা যাদের খুব বেশি হয় তাদের হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দিতে হবে। যদিও এই থেরাপি সম্বন্ধে নানা রকম প্রচরণা আছে। এটি দেওয়া যাবে না, দিলে ক্যানসার হবে ইত্যাদি।
এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে কিছু অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু সাময়কিভাবে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
প্রশ্ন : যদি এনডোমেট্রিয়াস ক্যানসার হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে?
উত্তর : যদি ক্যানসার হয়ে যায় তাহলে জরায়ু ফেলে দিতে হবে। আর যদি এমনি হয় তাহলে ডিএনসি করলে সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। অথবা যদি এনডোমিট্রাল হাইপার প্রেশারে হয় তখন কিছু প্রোজেস্টেরন থেরাপি দিতে হবে। তবে যদি কারো বারবার এই সমস্যা হয় তখন জরায়ু ফেলে দেওয়াই ভালো।
প্রশ্ন : এইচআরটি বা হরমোনাল থেরাপি কী? প্রিমেচিউর মেনোপোজ কী? এইচআরটির ব্যবহার কেন করা দরকার ?
উত্তর : যাদের লক্ষণগুলো বেশি হবে তাদের ক্ষেত্রে এইচআরটি ব্যবহার করতে হবে। সবাইকে যে এইচআরটি ব্যবহার করতে হবে তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে যেমন : ব্রেস্ট ক্যানসার, যাদের থম্বোএম্বোলিক ডিজিজ আছে, লিভারের অসুখ, কিডিনিতে অসুখ আছে তাদের ক্ষেত্রে এইচআরটি দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া লক্ষণ যদি বেশি থাকে এবং যদি কোনো ঝুঁকি না থাকে তখন এইচআরটি দেওয়া যাবে।
প্রিমেচিউর মেনোপোজ বলতে আমরা বুঝি কারো যদি ৪০ বছরের আগেই মাসিক বন্ধ হয়ে যায় তখন এটিকে প্রিমেচিউর মেনোপোজ বলি। সেটার অনেক কারণ রয়েছে। আবার কারণ ছাড়াই দেখা যায় মাসিক আগে আগে বন্ধ হয়ে গেছে। মা-খালার হয়তো কারো বন্ধ হয়ে গেছে, অটোইউমিন অসুখের জন্য এটি হতে পারে। কারো যদি ক্যানসার থাকে। রেডিওথেরাপি বা ক্যামোথেরাপি নিচ্ছে তাদেরও আগেই মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অনেকদিন থেকে ইনফার্টিলিটির চিকিৎসা নেওয়া হলেও মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে ৪০ -এর আগে যাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি জরুরি, না হলে তাদের ক্ষেত্রে অস্টিওপরোসিস, ফ্রেকচার এগুলো হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : পোস্ট মেনোপোজের ফলে কী কী অসুখ হতে পারে। এটি প্রতিরোধের জন্য পরামর্শ কী?
উত্তর : অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ বেশি হয়। মনোপোজের ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে।
এর প্রতিরোধের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিতে হবে। এই থেরাপি যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার পরপর কেউ এক বছরও ব্যবহার করে তাহলে তার ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন : পোস্ট মেনোপোজাল সময়ে খাওয়া-দাওয়া এবং জীবন যাপনে কোনো ভূমিকা রাখে কি না? এ ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : জীবনযাপনে নিয়মিত ব্যায়াম করা, হাঁটা, পরিমিত পানি খাওয়া এগুলো করতে হবে। ক্যালসিয়াম টেবলেট, মাল্টি ভিটামিন এগুলো খেলে সাধারণত সুস্থ থাকা যায়।ওষুধ না নিয়েও কিছু ডায়েট আছে সেগুলোর মাধ্যমে ধীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। যেমন : এলমল্ড ডায়েট, সয়া বি ডায়েট।