চুল প্রতিস্থাপন
চুল প্রতিস্থাপন বা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন বিষয়টি দেশে এখন বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠছে। চিকিৎসকরা বেশ সফলভাবেই এখন এটি করতে সক্ষম হচ্ছেন। চুল প্রতিস্থাপনের বিষয়ে আজ শনিবার (২৮.০২.২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৬০ পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কসমেটিক সার্জারি সেন্টারের পরামর্শক, কসমেটিক এবং চুল প্রতিস্থাপন সার্জন ডা. ফেরদৌস কাদের মিনু।
প্রশ্ন : হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বা চুল প্রতিস্থাপন বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : চুল প্রতিস্থাপন শরীরের অন্যান্য অংশ প্রতিস্থাপনের মতোই একটি বিষয়। এখানে একটি অংশ থেকে চুল নিয়ে অন্য অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়। সাধারণত যাদের চুল থাকে না তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। সারা বিশ্বে অনেক মানুষ রয়েছে যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে। আবার এমন অনেকে রয়েছে যাদের দুর্ঘটনার ফলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার পুড়ে যাওয়ার কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং যেকোনো কারণে চুল যদি পড়ে যায় এবং সেই রোগীর যদি স্বাস্থ্যকর ডোনার এরিয়া থাকে, তবে চুল প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।
প্রশ্ন : ‘হেলদি ডোনার এরিয়া’ বিষয়টি আসলে কী?
উত্তর : আমাদের মাথার চুল সাধারণত দুভাগে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে, মাথার প্রথম দিকে অস্থায়ী অংশ (টেম্পোরারি জোন) এবং মাথার পেছনের দিকে চিরস্থায়ী অংশ (পারমানেন্ট জোন)। যখন আমরা চুল প্রতিস্থাপন করি তখন চিরস্থায়ী অংশ থেকে চুল নিয়ে প্রতিস্থাপন করি। চিরস্থায়ী অংশে চুল থাকতে হবে এবং ঘনত্ব (ডেনসিটি) থাকতে হবে। হালকা ঘনত্ব করা যায়। কিন্তু এটা নির্ভর করবে কতখানি আমরা পূরণ করতে চাচ্ছি তার ওপর। তাই যদি ডোনার এরিয়ায় চুল থাকে পাশাপাশি ঘনত্ব থাকে, আমরা সফলভাবে যেকোনো জায়গায় চুল লাগিয়ে দিতে পারব।
প্রশ্ন : এই সার্জারিটি যখন আপনি করেন, তখন রোগীর কোন কোন বিষয়টি মাথায় রাখেন?
উত্তর : সাধারণত কোনো কিছুই খেয়াল রাখতে হবে না। রোগী স্বাস্থ্যবান হলেই করা যাবে। আমরা এটি ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে করছি, হাইপারটেনশিভ রোগীদের ক্ষেত্রেও করছি। এমনকি হৃদরোগের রোগীদেরও এই প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। কারণ এটা লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করা হয়। আমরা শুধু মাথার খুলি (স্কাল্প) অবশ করে কাজ করছি। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশিভ, হৃদরোগ এগুলো যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। সহজেই সার্জারিটা করতে পারি।
প্রশ্ন : সার্জারি করার পর রোগীর প্রতি আপনাদের কী কী ধরনের পরামর্শ থাকে?
উত্তর : রোগীকে আমরা বলে দিই এটি একটি পরিপূর্ণ সার্জারি। এখানে কেটে কাজ করা হবে। সার্জারির জটিলতা যা হয়, এখানেও এটি হতে পারে। তবে সাধারণত কোনো জটিলতা হয় না। কিন্তু তারপরও আমরা রোগীকে প্রস্তুত করি বিষয়টি সম্বন্ধে। সাধারণত ফলোআপের জন্য তেমন কিছু লাগে না। রোগী যখন চুল প্রতিস্থাপন করে গেল, যেদিন করবে তার পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে কারণ এটি অনেক সূক্ষ্ম একটি সার্জারি।
প্রশ্ন : আমরা জানি এই সার্জারিটি একটি দলগত কাজ। সাধারণত কোন কোন সার্জন আপনাদের সঙ্গে থাকেন?
উত্তর : প্লাস্টিক সার্জন অবশ্যই থাকে। প্রশিক্ষিত চুল প্রতিস্থাপন সার্জনরা অপারেশনটি করেন। ডার্মাটোলজিস্ট, যাঁদের প্রশিক্ষণ আছে তাঁরা করেন। আমাদের সঙ্গে কিছু কাটারস থাকেন, যাঁরা ফলিকল কাটতে সাহায্য করেন। এরা সবাই প্রশিক্ষিত।
প্রশ্ন : চুল প্রতিস্থাপনের বিষটি আমরা অনেক আগে থেকে জানলেও বাংলাদেশে ইদানীং এটি সহজলভ্য হচ্ছে। আপনারা কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
উত্তর : মোটামুটি সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু সব সার্জারিতেই একটি সমস্যা রয়েছে। রোগীরা আস্থা রাখতে পারে না এবং বিষয়টি সম্বন্ধে তাদের ধারণাও কম থাকে। এখানে রোগীকে বলতে হবে বিদেশে যে সার্জারিটা হচ্ছে সেটাই এখন বাংলাদেশে বসে আমরা সফলভাবে করতে পারছি।
প্রশ্ন : যতটুকু জানি, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এটার খরচ কম। কত টাকার মধ্যে আপনারা এটি করেন?
উত্তর : বিদেশে যেমন এক একটি ফলিকল হিসাবে টাকা নেয়। সেভাবে আমরা এখানে নেই না। সাধারণত এক লাখ ২০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ ৮০ হাজারের মতো খরচ পড়ে।
প্রশ্ন : মানুষ সৌন্দর্যসচেতন হচ্ছে। তবে অনেকে আবার ভয়ও পাচ্ছে সার্জারি করতে হবে এটি ভেবে। তাদের উদ্দেশে আপনার কী পরামর্শ?
উত্তর : ভয় পাওয়ার আসলে কিছু নেই। এটি খুব নিরাপদ একটি সার্জারি এবং লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করা হয়। আর ফলিকল দিলে চুল আসবেই। এটি অসফল হওয়ার আশঙ্কা কম। যদি রোগী নিয়ম মেনে চলে, তবে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
প্রশ্ন : যেখানে চুল প্রতিস্থাপন করা হয়, এই জায়গাটিকে কীভাবে যত্ন নিতে হবে এ সম্বন্ধে পরামর্শ রয়েছে কি?
উত্তর : রোগী একদমই সাধারণ জীবনযাপন করবে। একটি বিষয় বিশেষভাবে বলার রয়েছে। সেটি হচ্ছে, পরিষ্কার থাকতে হবে। রোগীকে কিছু মাল্টিভিটামিন দেওয়া হয়। এ সময় রোগী ধূমপান করতে পারবে না। চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে চুল গজাতে শুরু করে এবং এক বছরের মধ্যে এর সুফল পেয়ে যান রোগীরা। এটা একটু ধীর প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন : এটি দেখতে কি কৃত্রিম লাগবে?
উত্তর : এটি দেখতে একেবারেই কৃত্রিম লাগবে না। চুল স্বাভাবিকভাবেই গজাবে। প্রয়োজনে চুল কাটতেও পারবেন।