জলবসন্তে করণীয়
জলবসন্ত বা চিকেন পক্স একটি অতি সংক্রমক ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত শীতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতে এই রোগ বেশি হয়। শিশুদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। ৯০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে ১০ বছরের মধ্যে জলবসন্ত হয়ে থাকে। তবে ভালো বিষয় হচ্ছে, সাধারণত একবার চিকেন পক্স হলে পুনরায় রোগটি হতে দেখা যায় না।
জলবসন্তের লক্ষণ
জলবসন্ত হলে শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা প্রভৃতি হয়। জ্বর হওয়ার এক-দুদিনের মধ্যে গায়ে র্যাশ হতে দেখা যায়। এই র্যাশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে যেতে থাকে। এটি বেশ চুলকায়। প্রথমে একটু দাগের মতো থাকে। তারপর সেটি ব্লিস্টারের মতো হয়ে যায়। ব্লিস্টার হচ্ছে বড় ঘামাচির মতো দেখতে পানিভর্তি ফোড়া। ব্লিস্টার শুকিয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে পানির পরিবর্তে পুজ হতে দেখা যায়। ব্লিস্টার শুকিয়ে গেলে স্কেব তৈরি হয় এবং তা খসে পড়ে। দাগ পড়া থেকে স্কেব ঝরে যাওয়া পর্যন্ত এক থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে।
জলবসন্তের চিকিৎসা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত চুলকানোর জন্য অ্যান্টি হিসটামিন-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো চিকিৎসকরা ইমুলিয়েন্ট (সুদিং ক্রিম) ক্রিম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ ক্ষেত্রে অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সতর্কতা
অনেক সময় জলবসন্তের কারণে শরীরে দাগ হয়ে যায়। এই দাগ রোধ করতে কোনোভাবেই ব্লিস্টারকে ফাটানো যাবে না। তারপরও যদি দাগ দেখা যায়, সেটি সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে চলে যাবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কোলোজেন ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
প্রতিরোধ
জলবসন্ত অতিরিক্ত সংক্রমক। তাই এটি প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না যাওয়া এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তির পাশে বেশিক্ষণ অবস্থান না করা। বিশেষ করে ছোট শিশু বা বয়স্করা কোনোভাবেই আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাসায় বিশ্রামে থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের এটি হলে কিছুদিনের জন্য স্কুলে যাওয়া বা বাইরে খেলাধুলা করা বন্ধ করতে হবে।
লেখক : ডা. মুহাম্মদ হাসান আন্দালীব, অ্যাকসিডেন্ট ও ইমার্জেন্সি বিশেষজ্ঞ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।