বৃহদন্ত্রের ক্যানসার কী
কোলোরেকটাল ক্যানসার একটি মারাত্মক রোগ। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হলে রোগী অনেকটাই সুস্থ হয়ে যায়। কোলোরেকটাল ক্যানসারের বিষয়ে আজ রবিবার (০১ মার্চ ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৬১তম পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালমা সুলতানা।
প্রশ্ন : কোলোরেকটাল ক্যানসার অত্যন্ত আতঙ্কজনক একটি বিষয়। আমাদের দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। কোলোরেকটাল ক্যানসার মানে কী? শরীরের কোন অংশে এই ক্যানসার হয়?
উত্তর : আমাদের পেটের ভিতরে যে খাদ্যনালি আছে সেখানে অন্ত্র রয়েছে যেখানে খাবারগুলো পরিপাক হয়। অন্ত্রের দুই ভাগ রয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র। এই বৃহদন্ত্রকেই আমরা বলছি কোলন যেটা আমাদের পেটের ডান দিক থেকে শুরু হয়ে মাঝখান দিয়ে গিয়ে বাম দিক দিয়ে নামছে এবং শেষ পর্যন্ত পায়ুপথে এসে মলদ্বারের যেই গুহ্যদ্বার সেখানে এসে শেষ হচ্ছে। এই পুরো জায়গাটিই হচ্ছে কোলোরেকটাল অংশ। এই অংশে ক্যানসার হলে সেটাকে আমরা বলছি কোলোরেকটাল ক্যানসার।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে কোলোরেকটাল ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা কেমন?
উত্তর : পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে আগে মনে করা হতো যেকোনো ধরনের ক্যানসার একটু বয়স্ক রোগীদের হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে দেখছি তরুণ বয়সের রোগীর সংখ্যাও অনেক। ক্যানসারের মধ্যেও ভাগ আছে। অনেক খারাপ ধরনের ক্যানসার , একটু ভালো ধরনের ক্যানসার। এই রকম খারাপ ক্যানসারগুলো এখন তরুণদের মধ্যে বেশ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রশ্ন : কী বিষয়গুলো ক্যানসার হওয়ার প্রবণতাকে বাড়ায়? তরুণদের এই ক্যানার হওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?
উত্তর : কোলোরেকটাল ক্যানসারের কতগুলো রিস্ক ফেক্টর বা ঝুঁকির বিষয় আছে। তার মধ্যে একটি আছে পারিবারিক। কিছু রোগ আছে সেগুলো যদি জন্মগতভাবে কোলোনে থাকে, অনেক সময় রোগী হয়তো জানেই না তার এই সমস্যা আছে। এ ছাড়া যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে তাদের এই ক্যানসার হয়। এ ছাড়া খাদ্যাভাসও একটি বিষয়। যদি ফাইবার জাতীয় খাবার কম খায়। প্রচুর পরিমাণে লাল মাংস ( রেড মিট) খায়। অনেকদিন ধরেই যারা এই খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত বা একদমই পিউরিফাইড খাবার খায়- তাদের ক্ষেত্রে কোলোন ক্যানসারের ঝুঁকি খুবই বেশি।
এখন মানুষ রোগ সম্বন্ধে অনেক সচেতন হচ্ছে এবং চিকিৎসকের কাছে আসছে। তরুণরা চিকিৎসকের কাছে আসছে। আগে হয়তো বা তরুণ রোগী ছিলেন। কিন্তু এখন রোগীর একটু কিছু সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে আসছে। তাই তরুণ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া আরেকটি কারণ হতে পারে খাবারে যে অনেক ধরনের ভেজাল এসব কারণে হয়তো এই ক্যানাসার ইদানীং বাড়ছে।
প্রশ্ন : সাধারণত কোন পর্যায়ে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ দেখা দেয় এবং কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
উত্তর : কোলোনটা আমাদের পেটের সবদিকেই আছে। এখন কোন অংশ থেকে যে ক্যানাসারটা শুরু হলো, এটা কী ডান দিকে না বাম দিকে এর ওপরে রোগের লক্ষণগুলোর অনেক পার্থক্য হয়। সাধারণত যদি ডান দিকে হয় তখন রোগীর খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ওজন কমে যায়। পাশাপাশি রক্তশূন্যতা হয়। পায়খানার কোনো পরিবর্তন ছাড়াও এগুলো কিন্তু লক্ষণ হতে পারে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় মলত্যাগের স্বাভাবিক নিয়ম পরিবর্তন হয়ে যায়। দেখা যায় যে কখনো শক্ত পায়খানা হচ্ছে, কিছুদিন পাতলা পায়খানা হচ্ছে। আবার দেখা যায় যে আলকাতরার মতো কালোর রঙের পায়খানাও হয়তো হচ্ছে।
যখন বাম দিকে হয় বা মলদ্বারের কাছাকাছি জায়গায় এই ধরনের ক্যানসার হয় তখন রোগীর পায়খানার সঙ্গে একদম তাজা রক্ত বের হতে থাকে। সুতরাং অবস্থান অনুযায়ী এ লক্ষণের পার্থক্য হয়ে যায়।
প্রশ্ন : মলদ্বারে তো ক্যানসার ছাড়াও বিভিন্ন কারণে মলদ্বার দিয়ে রক্ত যেতে পারে তখন আপনারা কীভাবে রোগটি নির্ণয় করেন?
উত্তর : প্রথমত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ভালোভাবে রোগীর সঙ্গে আলোচনা করলে এটি বোঝা যায় এটি কী পায়ুপথের সাধারণ কোনো রোগের কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে না কি ক্যানসারের জন্য হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত আমরা কিছু পরীক্ষা করি। এর মধ্যে পেট পরীক্ষা করা হয়। মলদ্বারের নিচে আঙ্গুল দিয়ে প্রোক্টোসকোপ নামক যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখি। যদি মলদ্বারের নিচের দিকের কাছাকাছি কোনো টিউমার বা ক্যানসার এ রকম থাকে তখন এই পরীক্ষাতেই বোঝা যায়। আর এতেও যদি না বোঝা যায় সেক্ষেত্রে আমরা কোলোনোস্কোপি পরীক্ষা করতে দিই। মলদ্বার দিয়ে ছোট্ট ক্যামেরা ঢুকিয়ে পুরো কোলোনটা ভিডিওতে দেখা হয়। কোথাও যদি কোনো টিউমার পাওয়া যায় সেইক্ষেত্রে একই সঙ্গে বায়োস্কোপিও নেওয়া হয়। এর পর রোগটি কোন পার্যায়ে এসছে এটি দেখার জন্য সিটি স্ক্যান বা অন্যান্য পরীক্ষা করি।
প্রশ্ন : আমরা জানি ক্যানসারের কিছু পর্যায় থাকে সেটি অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে থাকে। সাধারণত এই ক্যানসারে কোন পর্যায়ে আপনারা কোন ধরনের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : কোলোরেকটাল ক্যানসারে যদি প্রাথমকি পর্যায়ে চিকিৎসা করা হয় তবে রোগী একদমই সুস্থ হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আসলে আমরা এটিকে অপারেশন করি। পুরোপুরি সুস্থ না করতে পারলেও টিউমারটি ফেলে দিতে পারি। আবার কিছু রোগী আসেন যাদের অবস্থা অনেক খারাপ। সেই ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা আগে থেকে ক্যামোথেরাপি দিয়ে নিই। ক্যামোথেরাপি দিলে টিউমারটি ছোট হয়ে আসে। আশপাশ থেকে ছেড়ে চলে আসে। তখন আমরা সহজেই অপারেশন করতে পারি। যে ধরনের পর্যায়েই অপারেশন করা হোক, কেবল টি ওয়ান ছাড়া সব পর্যায়েই অপারেশনের পরে রোগীকে ক্যামোথেরাপি নিতে হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে রোগী সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।