আক্কেল দাঁতের সমস্যায় করণীয়
আক্কেল দাঁত একটি সাধারণ সমস্যা। তবে শুরুতেই এই সমস্যার উপশম করা না হলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। আজ বুধবার (০৪ মার্চ ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৬৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরাল অ্যান্ড মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের পরামর্শক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল আজম রঞ্জু।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁতটি আসলে কোন দাঁত? সাধারণত এটি বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : সাধারণত ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সে মানুষের দুই চোয়ালের দুই দিকে মোট চারটি দাঁত উঠে। সেগুলোকে আমরা আক্কেল দাঁত বলি।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁত- এ রকম অদ্ভুত নামের পেছনে কারণ কী?
উত্তর : মানুষের আক্কেল আসে ১৮ বছরে পর থেকে। অনেকটা সেটির সাথেই এটি সম্পর্কিত।
প্রশ্ন : আক্কেল দাঁত উঠলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : আক্কেল দাঁতের সমস্যায় আমরা দেখি সাধারণত আক্কেল দাঁতের অবস্থান অনেক সময় ঠিক থাকে না। দাঁতটা উঠার সময় ব্যথা হতে পারে। অনেকের দাঁতটা ঠিকভাবে উঠে। আবার অনেকের ঠিক ভাবে উঠে না। অথবা অনেক সময় আংশিকভাবে আসে। গালের দিকে, জিহ্বার দিকে, উপরের মাড়ি থেকে তালুর দিকে দাঁতটা উঠতে পারে। আবার অনেক সময় দাঁতটি একেবারেই মাড়ির ভেতরে থাকে।
প্রশ্ন : এই সমস্যাগুলো যদি কারো হয় সে ক্ষেত্রে কী কী ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় রোগীর ক্ষেত্রে?
উত্তর : কারো ক্ষেত্রে ব্যথা হয় না। তখন স্বাভাবিকভাবেই দাঁতটি উঠে আসে। আবার কারো ক্ষেত্রে খুব ব্যথা হয়। কারণ দাঁতটি উঠার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার ততটুকু জায়গা না পেলে তখন একটি প্রদাহ হয়। তখন হা করতে কষ্ট হয়। কারো কারো ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। আবার যদি দাঁতটি স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকে তখন পাশের দাঁত এবং আক্কেল দাঁতে খাদ্যকণা জমে যায়। এটি হলে সেই ক্ষেত্রে পাশের দাঁতটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ পাশের দাঁতটি নিয়মিত ব্রাশ করলেও খাদ্যকণা দূর হয় না। সেই ক্ষেত্রে পাশের দাঁতটিতেও ব্যথা হতে পারে। আবার অনেকের মাড়ির প্রদাহ হয়ে থাকে। এটি থেকে ইনফেকশন হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে পুঁজ জমে যায়। আমাদের চেহারায় অনেক ধরনের জায়গা থাকে সেখানে পুঁজগুলো জমে যায়।তখন রোগীর খাওয়ায় সমস্যা হয়। শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে রোগী অনেক সময় মারাও যেতে পারে।
প্রশ্ন : যখন ওই জাতীয় রোগীরা আপনাদের কাছে আসে তখন প্রাথমিকভাবে করণীয় কী থাকে?
উত্তর : প্রথমে আমরা রোগীর ইতিহাসটা নিই। ফোলাটা কতদিন ধরে আছে সেটি জানি। অনেক সময় বয়সের সঙ্গেও এটি নির্ভর করে। যেটা অনেকেই ভুল করে মনে করে যে টনসিল ফুলে গেছে। কেউ বলে মামস হয়েছে। তখন বিভিন্ন মেডিসিনের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খায় তখন পুজটা অনেক দিন থেকে যায়। সেটা দুই তিন মাস থাকে, যেটাকে আমরা অ্যান্টি বায়োমা বলি। যখন আমাদের কাছে আসে তখন প্রথম পর্যায়ে আমরা একটি এক্সরে করি। তার মুখ হা করানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁতটি ফেলে দিই।
প্রশ্ন : এই আক্কেল দাঁত ফেলে দেওয়ার জন্য অনেকেই অনেক সময় ভীতিকর অবস্থায় পড়ে। আক্কেল দাঁত ফেলতে চায় না। তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?
উত্তর : ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজ যদি ব্যহত হয় তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আক্কেল দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত। কিছুদিন রোগীর কিছু সমস্যা হয়, কয়েকদিন খেতে কষ্ট হয়। হা করতে কষ্ট হয়। আবার চিকিৎসক অভিজ্ঞ না হলে অনেক ক্ষেত্রেই দাঁতটি ফেলতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে মেক্সোলোফেসিয়াল সার্জনদের কাছে গিয়ে দাঁতটি অবশ্যই ফেলা উচিত। না হলে ফেলতে গিয়ে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : চিকিৎসা পদ্ধতিটা আপনারা কীভাবে ঠিক করেন?
উত্তর : চিকিৎসা পদ্ধতিটা দুইভাবে- লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে কাজটি করি। আবার কেউ যদি খুব বেশি ভয় পায় তবে জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়েও দাঁত ফেলি। যদি এক্সরে করে বোঝা যায় একটি দাঁত ব্যথা করছে আবার অন্য কয়েকটি দাতেঁ সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে সব দাঁত ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিই।
প্রশ্ন : যদি রোগী দাঁত ফেলে না দেন এবং ওষুধ খেয়ে কমাতে চেষ্টা করেন সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : রোগী অনেক সময় ব্যথার ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ভালো থাকে তখন একসময় না একসময় ব্যথা করবেই। সেই ক্ষেত্রে মাড়ির প্রদাহ থেকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যা মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে পুঁজটি যে তৈরি হয়েছে সেটি গাল ফেটে বের হতে পারে। অথবা অনেক সময় গাল থেকে পুঁজ সবসময় বের হতে পারে। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা। তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রথম বা দ্বিতীয়বার সমস্যা হওয়ার সময় দাঁতটি তুলে ফেলা উচিত।
প্রশ্ন : অনেক সময় অনভিজ্ঞতার ফলে কিছু সমস্যা হতে পারে দাঁত ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে। সেই ক্ষেত্রে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : কোনো স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে হয়তো গেল সেক্ষেত্রে হয়তো দাঁতটা ভেঙে যায়। কারো নিচের চোয়ালটা ভেঙে যেতে পারে। বা কারো অনেক সময় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীদের সচেতন হয়ে মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : প্রতিরোধের কিছু রয়েছে কি না?
উত্তর : প্রতিরোধের আসলে তেমন কিছু নেই। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে, পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সঠিক সময় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।