এফডিসিতে হুমায়ুন ফরীদির জন্য এমন মিলাদ!
দেশের শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যবার্ষিকীতে এফডিসিতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় আজ বুধবার। আয়োজক বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মসজিদের ইমাম আর কয়েকজন সহশিল্পী উপস্থিত থাকলেও পরিচিত শিল্পীদের কাউকে দেখা যায়নি।
বিকেলে আসর নামাজের পর এফডিসির বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির স্টাডিরুমে ওই মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়।
২০১২ সালে সকাল ১০টায় আজকের দিনে ধানমণ্ডিতে নিজের বাসায় মারা যান বাংলাদেশের শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। মৃত্যুর এত বছর পরও হুমায়ুন ফরীদিকে স্মরণ করেই এই আয়োজন।
বিষয়টি নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমার দায়িত্ব এমন বরেণ্য শিল্পীদের জন্য দোয়ার ব্যবস্থা করা। আমি নিজে সব শিল্পীকে মোবাইলে এসএমএস করেছি। সমিতির সামনে ব্যানার লাগিয়েছি। ফেসবুকে লিখেছি। তারপরও যখন দেখলাম কেউ আসেনি, তখন আমার নিজেরও মন খারাপ হয়েছে।’
এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জায়েদ খান বলেন, ‘যখন কোন শিল্পী মারা যান তখনও জানাজা পড়তে অনেক শিল্পীই আসে না। আমি গত প্রায় দুই বছর ধরে সমিতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার মনে হয়, আমি মারা গেলেও তেমন কেউ জানাজা পড়তে আসবেন না। আমি মনে করি শুধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেই সম্মান জানানো হয় না।’
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি।
১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। এ উৎসবের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে একজন মেধাবী ও শক্তিমান নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। অভিনয়ের অসাধারণত্বে যে আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ফরীদি, তাঁর সেই উচ্চতায় এ দেশের খুব কম মানুষই পৌঁছাতে পেরেছেন।
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু ঢাকাতেই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রেও অসামান্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চনাটক, টিভি ও সিনেমায় অভিনয় করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। ফরীদি তাঁর কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফরীদি অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘শ্যামল ছায়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আহা!’, ‘হুলিয়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘দহন’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’ প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল নকশার সন্ধানে’ (১৯৮২), ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ (১৯৮২), ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ (১৯৮৩), ‘ভবের হাট’ (২০০৭), ‘শৃঙ্খল’ (২০১০) প্রভৃতি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ নাটকে ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।