ছাতকে আ.লীগের বন্ধুকযুদ্ধ, ৩৯৫ জনের নামে পুলিশের মামলা
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুরমা নদীতে চাঁদাবাজি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতসহ ৩৫ জন আহত হন। এ সময় ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামালসহ তিন পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এছাড়া আরো পাঁচ পুলিশ আহতসহ অাটজন আহত হন। এই ঘটনায় বুধবার দুপুরে পুলিশ বাদী হয়ে ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে একটি পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা করা হয়।
রাতেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে এই ঘটনায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, নদীতে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ছাতক পৌর শহরে এই সংঘর্ষের ঘটে। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি হলেন পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে ভ্যানচালক শাহাব উদ্দিন (৪৫)। তিনি মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সংঘর্ষে আহত ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামালসহ ছয় পুলিশ সদস্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎাসীধন আছেন। এর মধ্যে তিনজনের গায়ে ছররা গুলি লেগেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় জানায়, ছাতকে সুরমা ও স্থানীয় আরো কয়েকটি নদীতে বালু ও পাথর পরিবহনকারী নৌযান থেকে চাঁদাবাজি এবং নদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শহরের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এই দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এক পক্ষে আছেন ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম চৌধুরীর ছোট ভাই ছাতক চুনাপাথর আমদানি ও সরবরাহ সমিতির সভাপতি সেলিম আহমদ চৌধুরী। অন্যপক্ষে ছাতক পৌরসভার কাউন্সিলর তাপস ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিন চৌধুরী। কাউন্সিলর তাপসসহ আরো ৯ কাউন্সিলর মিলে ‘শাহজালাল সমিতি’ নামে একটি সংগঠন করেছে। ওই সংগঠনের নামে নদী থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। সম্প্রতি এর বিরোধীতা করে সেলিম আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি পক্ষ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। নদীতে চাঁদাবাজির ঘটনায় গত রোববার সুরমা নদীতে কাউন্সিলর তাপসের পক্ষের লোকজন চাঁদার টাকা তুলতে গেলে পুলিশ দুইজনকে আটক করে। এনিয়ে শামীম আহমেদ চৌধুরীর লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কাউন্সিলর তাপসকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করে লেখালেখি করে। এ নিয়ে শাহিন চৌধুরী কাউন্সিলর তাপসের পক্ষ নিয়ে পাল্টা জবাব দেন। ফেসবুকে গালাগালির জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে উভয়পক্ষ ছাতক পৌর শহরে জড়ো হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে শহরের জালালিয়া মাদ্রাসার সামনে দুই পক্ষ জড়ো হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে নিজেরাও আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হন ভ্যানচালক শাহাব উদ্দিন। পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। শাহাব উদ্দিন কাউন্সিলরদের পক্ষের লোক।
সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার দুপুরে পুলিশ বাদী হয়ে ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৩০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পরে আটক ২৮ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন জানান, মূলত আধিপত্য বিস্তার ও নদীতে চাঁবাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে। এতে একপক্ষের গুলিতে শাহাব উদ্দিন নামের একজন মারা গেছেন। ঘটনায় থানার ওসি গুলিবিদ্ধসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ এ পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে হয়েছে। একজন নিহতের ঘটনায় তার পরিবার মামলা করবে, সেটিও প্রক্রিয়াধীন আছে।