সুনামগঞ্জে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিজিবির সচেতনতা, বিন্যামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়েছে সুনামগঞ্জের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ২৮ ব্যাটালিয়ন। তারা হাওর এলাকায় বন্যাদুর্গত সহস্রাধিক লোককে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার তাহিরপুরে ভারত সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট এলাকায় এই চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিজিবির ২৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম। এ সময় অন্যদের মধ্যে সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ বিজিবির মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মুস্তাহিদ ও তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মো. সাব্বির আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি চিকিৎসক দল দিনব্যাপী লোকজনকে চিকিৎসাসেবা দেন। উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন দিনব্যাপী এই মেডিকেল ক্যাম্পে সেবা নেন। চিকিৎসাসেবার মধ্যে সাধারণ রোগের পাশাপাশি ইসিজি, ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস নির্ণয় করাসহ শিশুদের জ্বর, সর্দি ও নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দেওয়া হয়।
উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমাগ্রামের মহম্মদ আলী (৭৩) বলেন, অনেক দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিকসে ভুগছি। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারিনি। পরে শুনলাম বিজিবি টেকেরঘাট চিকিৎসা দিবে। আজকে এসে দেখি ডাক্তার, ওষুধ সব নিয়ে হাজির হয়েছে। আমার রক্ত পরীক্ষা করে আমাকে সব ধরনের ওষুধ দিয়েছে। আল্লাহ তাদের ভালো করুক।
একই গ্রামের হাজেরা বেগম বলেন, ‘আমার ডায়াবেটিস। অনেক দিন ধরে কষ্ট করেছি। আজকে বিজিবির তারা আমাকে দেখে ওষুধ দিয়েছে।’
রীমা বেগম বলেন, আমি নিজেও শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। আমাকেও দেখে ওষুধ দিয়েছে। আমার দুই বাচ্চা সোহান ও বিল্লালকে দেখেও ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে। আমার ছোট বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েছে। তারা দেখে ওষুধপত্র দিয়েছে।
জোৎস্না বেগম (৩০) বলেন, ‘আমরা এমন জায়গায় থাকি ডাক্তার আর ওষুধ কোনো কিছুই পাই না। ডাক্তার দেখাতে আমাদের তাহিরপুর যেতে হয়, না হয় সুনামগঞ্জে যাওয়া লাগে। তাই নিজের বাড়ির পাশে ডাক্তারসহ ওষুধ পেয়ে ভালোই লাগছে।
সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মাকসুদুল আলম জানান, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের হতদরিদ্র এক হাজারেরও বেশি লোককে সাধারণ ও ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় করাসহ ওষুধ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শিশুদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীকে দুপুরের খাবারও পরিবেশন করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় মানুষজনকে এই বিষয়ে বিস্তর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নিজেদের সচেতন করতে আমরা প্রায় এক ঘণ্টার ক্লাস নিয়েছি।
মাকসুদুল আলম বলেন, ভালো লাগছে অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলোকে তাদের বাড়ির পাশে এসে চিকিৎসাসেবা দিতে পারছি। আর দেখা গেছে একই পরিবারের মা-বাবা তিন-চার সন্তান একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। তাদের ওষুধও দেওয়া হয়েছে।