জাবিতে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি
‘পয়লা বৈশাখে সংগঠিত যৌন নিপীড়নের বিচারের দাবিতে’ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে দুর্ব্যবহার ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন বক্তারা।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চ’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।
যৌন হেনস্থাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা ও পুলিশে সোপর্দ এবং নিপীড়িত ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নিয়ে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনার পর পুরো একদিন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ওই ছাত্রীর সাথে আন্তরিক আচরণ করেননি।’
সমাবেশে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা আজ এখানে নরপশুদের বিচার চাইতে এসেছি। এই ক্যাম্পাসে আর কোনো ‘মানিকের’ উত্থান ঘটুক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন ঘটনার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়নি, তা জানতে চাই। প্রক্টর কোন সাহসে নিপীড়িত শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। তিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আমরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি। অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর দাবি না মানা হলে আমরা জানি কিভাবে তা আদায় করতে হবে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম দুর্জয়, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মো. মজিবর রহমান ও অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন, মাহমুদুল হাসান সুমন, সহকারী অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি, ফখরুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়ন-জাবি সংসদের সভাপতি তন্ময় ধর, ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয় সেন তনচংগ্যা প্রমুখ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরে মিছিল নিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। এ সময় উপাচার্য কার্যালয়ে না থাকায় তাঁর পক্ষে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
স্মারকলিপি জমা দেওয়ার আগ মুহূর্তে অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন সহ-উপাচার্যের উদ্দেশে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যদি নিপীড়িত ছাত্রীর সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তা না-ই জানেন, তিনি কিভাবে প্রক্টর পদে থাকতে পারেন। আমরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি।’
এ ছাড়া যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলও দায়িত্বে অবহেলা দেখাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত তারা সভা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাসিম আখতার।
তবে পদত্যাগ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খারাপ আচরণ তো করি-ইনি বরং অভিযোগ পাওয়ার পর ওই দিনই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার এনটিভি অনলাইনকে মুঠোফোনে বলেন, ‘এমন অভিযোগ তো করাই যায়। তবে বাস্তবতাও তো দেখতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযোগ পাই এবং তার পরের দিন ছিল শুক্রবার। আজকে শনিবার সবার নামে চিঠি ইস্যু করেছি।
আগামীকাল রোববার দুপুর আড়াইটায় সভা আহ্বান করেছি। এখানে তো হুড়োহুড়ি করার কিছু নেই।’
গত মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মীর হাতে যৌন হেনস্থার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের এক আদিবাসী ছাত্রী। এর বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্যের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে পাঁচ নেতা-কর্মীকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। অন্যদিকে শুক্রবার একক ক্ষমতাবলে আট শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।