গণিতে সৃজনশীল প্রশ্নেই সিলেটে ফল খারাপ !
সিলেটে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ৫-এর সংখ্যা কমেছে। এমনকি মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে প্রথম থেকে বোর্ড তালিকার শেষে চলে গেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। আর এর কারণ হিসেবে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি নতুন প্রবর্তিত সৃজনশীল পদ্ধতির গণিতের কথা বলছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড।
urgentPhoto ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এবার পাস করেছে ৮১.৮২ ভাগ, যা গতবারের তুলনায় ৭ দশমিক ৪১ ভাগ কম। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে দুই হাজার ৪৫২ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৩৪১ জন।
আজ শনিবার সকালে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল মান্নান খান। তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার পার্সেন্টেজটা একটু ডাউন হয়ে গেছে। সেটা শুধু আমাদের এখানে না, সারা বাংলাদেশেই আপনারা দেখবেন এবং এই ক্ষেত্রে যেটা অ্যাফেক্ট করেছে আমাদের একটি নতুন পদ্ধতি হয়েছে গণিতে সৃজনশীল। ওই সৃজনশীলটাই একটু নতুনের জন্য। পদ্ধতি খুবই ভালো কিন্তু প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে গিয়ে হয়তো আমরা সমভাবে সব জায়গায় প্রশিক্ষণ দিতে পারি নাই বা ছাত্ররাও ওইভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে নাই। এখানে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। পরীক্ষাটা আমরা কিন্তু যথাসময়ে কোনোটাই নিতে পারি নাই। প্রত্যেকটাই আমরা শুক্র-শনিবারে নিয়েছি। পরীক্ষার্থীদের আমরা একদিন আগে জানাইসি, যার কারণে ওরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে নাই। এই প্রস্তুতিটাও কিন্তু বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সেটাও একটা কারণ।’
এবার এসএসসি পরীক্ষায় সিলেট বোর্ডে পাস করেছে শতকরা ৮১ দশমিক ৮২ ভাগ শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে দুই হাজার ৪৫২ জন। এবার সিলেট বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার ২৪৫ জন। এদের মধ্যে ৩২ হাজার ৪১৩ জন ছেলের মধ্যে পাস করেছে ২৬ হাজার ৯৬৬ জন। ছেলেদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ২০ ভাগ।
এদিকে ৩৯ হাজার ৬১১ জন মেয়ে পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩১ হাজার ৯৬৬ জন। মেয়েদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭০ ভাগ।
সিলেট বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৫ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৪ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে ছেলে সাত হাজার ৭৪৯ জন, মেয়ে ছয় হাজার ৭০৯ জন। পাসের হার ছেলে ৯৫ দশমিক ১৫, মেয়ে ৯৫ দশমিক ০৮ ভাগ। জিপিএ ৫ পেয়েছে দুই হাজার ৩৪১ জন। এর মধ্যে ছেলে এক হাজার ২৮৬ জন, মেয়ে এক হাজার ৫৫ জন।
মানবিক বিভাগ থেকে ৪৮ হাজার ৮০৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৭ হাজার ৩১৩ জন। এদের মধ্যে ছেলে ১৫ হাজার ২২ জন ও মেয়ে ২২ হাজার ২৯১ জন। পাসের হার ছেলে ৭৬ দশমিক ৯৭, মেয়ে ৭৬ দশমিক ১১ ভাগ। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৩ জন। এর মধ্যে ছেলে নয়জন, মেয়ে ৩৪ জন।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে আট হাজার ২১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে সাত হাজার ১৬১ জন। ছেলে চার হাজার ১৯৫ জন, মেয়ে দুই হাজার ৯৬৬ জন। পাসের হার ছেলে ৮৮ দশমিক ২৮, মেয়ে ৯০ দশমিক ৭৩ ভাগ। এর মধ্যে জিপিএ পায় ৬৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৩ জন, মেয়ে ২৫ জন।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের দিক থেকে সেরা ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবারও প্রথম স্থান লাভ করেছে সিলেট সদর উপজেলার সিলেট ক্যাডেট কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই জিপিএ ৫ পেয়েছে। দ্বিতীয় হয়েছে সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করলেও জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪২ জন। তৃতীয় হয়েছে সিলেট নগরীর ব্লু বার্ড হাই স্কুল। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২৮০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫৩ জন।
পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিসহ ছয়টি সূচকে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এবারও সেরাদের সেরা হয়েছে সিলেট ক্যাডেট কলেজ। গতবার তৃতীয় স্থানে থাকা জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ একধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে। আর একধাপ পিছিয়ে তৃতীয় হয়েছে ব্লু-বার্ড হাই স্কুল। এ ছাড়া সেরা ২০-এর তালিকায় থাকা অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো যথাক্রমে সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বিএএফ শাহিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শমশেরনগর, সিলেটের স্কলার্স হোম, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার হোমল্যান্ড আইডিয়াল স্কুল, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হবিগঞ্জের বি কে জি সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেটের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল, মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার এস কে জি উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেটের আল আমিন জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দি বার্ডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেটের শাহজালাল জামিয়া ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মৌলভীবাজারের রোকেয়া খাতুন লাইসিয়াম স্কুল, হবিগঞ্জের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড হাই স্কুল, সিলেটের বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জের এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।