বাংলা একাডেমিতে সরদার ফজলুল করিমকে স্মরণ
প্রখ্যাত দার্শনিক-শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি গতকাল ১৫ জুন-২০১৫, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। সরদার ফজলুল করিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী এবং সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সরদার ফজলুল করিমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর পর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গান পরিবেশন করে সরদার ফজলুল করিমকে শ্রদ্ধা জানান।
ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, সরদার ফজলুল করিমের বর্ণাঢ্য জীবন ও আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এরূপ গুণী মানুষ সম্পর্কে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অবহিত করতে হবে। তাঁর মহান কর্মময় জীবনকে স্মরণ করার মাধ্যমে আমরা তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে পারি।
অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, সরদার ফজলুল করিম ছিলেন একাধারে বামপন্থী, দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী। তিনি শিল্প-সাহিত্যের দিকে বেশি না ঝুঁকে দর্শন ও রাজনীতির দিকেই তাঁর মনোযোগ নিবিষ্ট করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেউ সক্রিয়ভাবে বাম দল না করেও বামপন্থী হতে পারে। তিনি সর্বদা সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছেন। সাধারণ জনগণ ও দুর্বলের প্রতি ছিল তাঁর পক্ষপাতিত্ব। অপরিমেয় মানবিক ভালোবাসার জন্য তাঁকে সবাই মনে রাখবে। তাঁর লেখাগুলো চলমান জীবনপ্রবাহের ফটোগ্রাফ হিসেবে টিকে থাকবে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরদার ফজলুল করিম সমস্ত জীবন কাজ করেছেন। তাঁর কাজের ক্ষেত্র ছিল অনেক ব্যাপক। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমি কৃষকের সন্তান।’ তাঁর মধ্যে যেসব গুণ ছিল, তা একজন কৃষকের মধ্যেও বিদ্যমান। কৃষকের মুক্তির কথা তিনি ভাবতেন। বিদ্যা-বুদ্ধি-জ্ঞান কোনো কিছু নিয়েই তাঁর কোনো অহমিকা ছিল না।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে সরদার ফজলুল করিমের যে প্রজ্ঞা, তা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি আমাদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিলেন যে, স্ফুলিঙ্গ একদিন দাবানল হয়ে জ্বলে উঠবেই। তিনি আমাদের যে জ্ঞান দিয়ে গেছেন, তা অনুসরণ করেই আমরা বর্তমান বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরদার ফজলুল করিম ছিলেন একজন অনন্যপণ্ডিত ও জ্ঞানতাপস। তাঁর কথার মতোই সাবলীল ও বলিষ্ঠ ছিল তাঁর লেখনী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথোপকথন ছিল তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের মৃত্যু আছে, কিন্তু স্বপ্ন ও কর্মের কোনো মৃত্যু নেই।
এর পর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সরদার ফজলুল করিমের মেয়ে ড. আফসানা স্বাতী, ড. স্বপন আদনান, ড. শান্তনু মজুমদার, অধ্যাপক সুলতানা বেগম, মারজিয়া লিপি, ফজলুল আলম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, সরদার ফজলুল করিম সামান্য অবস্থা থেকে নিজ প্রতিভাবলে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। বিদ্যার সঙ্গে আন্তরিক অনুভূতির সংযোগে তিনি জীবন বিনির্মাণ করেছিলেন এবং সমাজ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। জ্ঞানতাত্ত্বিক জগতে তাঁর যে বিচরণ, তা কেবল মার্কসবাদী চিন্তাধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি সারা জীবন মানবিক মূল্যবোধকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছেন।