‘ছোট’ নিপার লক্ষ্য উচ্চশিক্ষা
উচ্চতা মাত্র দুই ফুট। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। হামাগুড়ি দিয়ে এবং অন্যের সাহায্যে তাঁর চলাফেরা। তবু তিনি দমেননি। লক্ষ্য, উচ্চশিক্ষা অর্জন করা; কারো বোঝা না হওয়া। কিন্তু হতদরিদ্র বাবার পক্ষে তাঁর লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয়। তাই নিজেই বেছে নিয়েছেন অর্থ উপার্জনের পথ। টিউশনি করে যে টাকা পান, তা দিয়েই চলে তাঁর পড়াশোনার খরচ।
এ হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বেজগাঁও গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেনের শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে নিপা আক্তারের (২৮) জীবন-সংগ্রামের কাহিনী। দুই সন্তানের মধ্যে নিপা বড়। কেন্দুয়ার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি পাস করেন। পরিবারের লোকজন ও সহপাঠীরা কোলে করে তাঁকে বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া করত। এসএসসি পাস করার পর দেলোয়ার হোসেন অর্থাভাবে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিপার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মানতে হয় সবাইকে। ভর্তি হন কেন্দুয়া ডিগ্রি কলেজে। ওই কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি ডিগ্রিতে পড়ছেন। এসএসসি পাস করার পর থেকেই নিপা আশপাশের শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে নিজের লেখাপড়া এবং অন্যান্য খরচ জোগাড় করছেন। নিজের যোগ্যতায় কোনো সরকারি চাকরি করে জীবন চালাতে চান। হোক শিক্ষকতা, স্বাস্থ্যকর্মী বা ব্যাংকার। এ জন্য তিনি সরকার তথা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।
নিপা বলেন, ‘আমি কারো বোঝা হতে চাই না, স্বাবলম্বী হয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করতে চাই। আমার দুর্গম পথচলায় বাবা-মা ও কয়েকজন সহপাঠীর সহযোগিতা পেয়েছি। নিজের যোগ্যতায় আমি সরকারি চাকরি করতে চাই।’
নিপার বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে নিপা খুব জেদি এবং লেখাপড়ায় মনোযোগী। ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করার পর লেখাপড়া না করতে বলেছিলাম। কিন্তু ওর জেদের কাছে আমাকে হার মানতে হয়েছে। প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ নিজেই জোগাড় করে। প্রতিবন্ধী বলে সে সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি।’