দেশে দেশে রোজা
রমজানে ইরাকিরা কী খান?
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে রমজানে আগের জৌলুস নেই। তার পরও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে ইরাকিরা তাঁদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এখনো তাঁরা তাঁদের আপন ঐতিহ্যে রমজান মাসকে স্বাগত জানান। তোপধ্বনির মাধ্যমে রমজানের চাঁদকে অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে তাঁদের রোজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। খাবার-দাবারের জন্য দুনিয়াজুড়ে সুনামের অধিকারী এই দেশটিতে রমজানের খাবারে থাকে বৈচিত্র্য। সেহরির সময় অল্প আহার করলেও ইফতারে থাকে নানা আয়োজন।
ঐতিহ্যগতভাবেই ইরাকিরা সামাজিক। রমজানে তাঁদের সামাজিকতা চোখে পড়ার মতো। পুরো রোজার মাস প্রতিবেশীদের মধ্যে ইফতার আদান-প্রদান হয়। অনেক সময় নিজেদের ঘরে তৈরি খাবারও নিজেরা খাওয়ার সুযোগ পান না তাঁরা। ইরাকিদের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ হিসেবে তাঁরা সাধারণত খোলা ছাদে বা বাড়ির সামনে খোলা প্রাঙ্গণে বসে সবাই মিলে ইফতার করতে পছন্দ করেন। মসজিদগুলোতে থাকে উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন।
ইরাকে রোজার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় মাসখানেক আগে থেকেই। নানা রকম রান্নার জোগাড়যন্ত্রে ভরতে থাকে ইরাকিদের ভাঁড়ার। এই ভাঁড়ারকে স্থানীয় ভাষায় ‘মুনেহ’ বলা হয়। মুনেহতে সাধারণত অপচনশীল শুকনো খাবার-দাবার সংরক্ষণ করা হয়।
তোপধ্বনি শুনে ইরাকিরা সেহরি ও ইফতার করেন। তুর্কির উসমানীয় শাসনামল থেকে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। সেহরির সময় খুবই অল্প আহার করেন তাঁরা। এ সময় সাধারণত তাঁরা মাখন দিয়ে রুটি আর শসা খেয়ে থাকেন। সঙ্গে থাকে নানা পদের শরবত। এ সময় প্রচুর পানি পান করেন তাঁরা।
বেশির ভাগ ইরাকি গরু, মহিষ কিংবা ছাগলের দুধ পান করে রোজা ভাঙে। এর পর তাঁরা বসরার খেজুর খান, সঙ্গে বিশেষ ধরনের শরবত, যা তাঁরা ইফতার-সেহরি উভয় সময়ই পান করেন। ইফতারে বাড়ি বাড়ি তৈরি হয় মিষ্টি, বিরিয়ানি, কাবাব। ময়দা, চাল এবং আলু দিয়ে তৈরি কুব্বা বুরগাল, কুব্বা হালেব ও পটেটো চপের পাশাপাশি মিষ্টি ও নুডলস দিয়ে বানানো সুস্বাদু খাবার ‘হালাওয়াত শারিয়াহ’ ইফতারের টেবিলে খুবই জনপ্রিয়। ইরাকের বাইরে এ খাবার ‘সুইট অ্যান্ড গোল্ডেন ভার্মিসেলি নুডলস’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া দৈনন্দিন খাবার ‘শেখ মাহসি’ এবং ‘দোলমা’ও থাকে ইফতারে। সবজি দিয়ে কয়েক পদের দোলমা বানানো হয়। আর শেখ মাহসি তৈরি হয় মাংস ও বেগুন দিয়ে। এ ছাড়া ইফতারে থাকে গরু, মহিষ কিংবা ভেড়ার কাবাব, বিরিয়ানি, নাওয়াশিফ এবং থারিড। শেষের দুই পদ মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।
রমজানের শেষ ১০ দিন অবশ্য ইরাকিদের ঘর থাকবে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ‘ক্লেইচা’ দিয়ে। কেবল রমজানের সময় নয়, যেকোনো উৎসবে বিস্কুটজাতীয় এই খাবারের কদর অনেক। খেজুর, বাদাম, চিনি ও শুকনো নারকেলে ভরা ইরাকের জাতীয় বিস্কুট হিসেবে পরিচিত এই ক্লেইচা খুবই সুস্বাদু। তাই ইরাকিদের সব উৎসবে আপ্যায়নের টেবিলে নানা আকৃতির ক্লেইচা দেখা যায়। স্বাদের পাশাপাশি এর গন্ধও মনমাতানো। ক্লেইচা সাধারণত এলাচের ফ্লেভারের হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে গোলাপের ফ্লেভার দিয়েও তৈরি হয়। স্যাফ্রন রং দেওয়া এই বিস্কুট সাধারণত চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
রেসিপি : শেখ মাহসি
এই খাবার ইরাকিদের খুবই পছন্দ। মাংস ও বেগুন দিয়ে তৈরি সুস্বাদু শেখ মাহসি রুটি কিংবা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
চার থেকে ছয়জনের জন্য
‘শেখ মাহসি’ তৈরির উপকরণ
বেগুন : ৭৫০ গ্রাম ছোট
মাখন বা তেল : এক টেবিল চামচ
পুর বানানোর জন্য লাগবে
মাখন বা তেল : এক টেবিল চামচ
ভেড়ার মাংস : ২০০ গ্রাম মাংস কুচি করে কাটা
পেঁয়াজ : একটি, কুচি করে কাটা
জিরা : এক চা চামচ
গরম মসলা : এক চা চামচ
লবণ ও কালো গোলমরিচের গুঁড়া : পরিমাণমতো
ভাজা পাইন নাট ( বিশেষ ধরনের বাদাম) : ৫০ গ্রাম
সস তৈরির জন্য লাগবে
পানি : ৪০০ মিলিলিটার গরম পানি
টমেটো : ৭৫ গ্রাম টমেটো পেস্ট
১/২ চা চামচ সাদা গোলমরিচের গুঁড়া
১/২ চা চামচ কালো গোলমরিচের গুঁড়া
সাজানোর জন্য লাগবে :
দুটি মাঝারি সাইজের টমেটো, চাক চাক করে কাটা
যেভাবে তৈরি করবেন
বেগুন পরিষ্কার করে বোঁটাসহ দুই টুকরো করে নিতে হবে। ফ্রাই প্যানে মাখন অথবা তেল দিয়ে তাতে বেগুন বাদামি না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। বেগুন নামানোর পর পুর তৈরি করার জন্য প্যানে মাখন দিতে হবে। মাখন গরম হলে তাতে পেঁয়াজ দিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি হলে কুচি কুচি করে কাটা মাংস, গরম মসলা, লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। ১০ মিনিট মাংস ভাজার পর পাইন নাট দেওয়ার পর আঁচ থেকে নামাতে হবে। ভাজা বেগুনের মাঝের কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন করে পকেটের মতো তৈরি করতে হবে। তাতে মাংসের পুর ভরতে হবে। অন্য একটি পাত্রে গরম পানিতে টমেটো পেস্ট দিয়ে ফুটাতে হবে। তাতে লবণ ও দুই ধরনের গোলমরিচ দিয়ে ঘন না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে। ঘন হওয়ার পর নামিয়ে পুরভরা বেগুনের ওপর এই সস ছড়িয়ে দিতে হবে। এর পর চাক করে কাটা চমেটো ওপরে দিয়ে সাজিয়ে ৪০০ ফারেনহাইট অথবা ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রিহিটেড ওভেনে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট বেক করতে হবে। এর পর বের করে রুটি কিংবা ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করতে হবে দারুণ মজার ‘শেখ মাহসি’।