‘বাগ্মিতায় বাগালেন’ মন্ত্রিত্ব
বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন নুরুজ্জামান আহমেদ। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের টিকেট পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঋণ খেলাপির অভিযোগে প্রথমে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। আপলি করেন কমিশনে, তাতে কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেন উচ্চ আদালতের। শুনানির জন্য ঝুলে থাকে বিষয়টি।
এদিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকায় আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ তুলে দেয় ওই সময়ের জোটসঙ্গী গণফোরাম মনোনীত প্রার্থী এমদাদুল হককে। আর তখন লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একটি অংশ কাজ শুরু করে এমদাদুলের পক্ষে।
কয়েকদিন পরই উচ্চ আদালত নুরুজ্জামানের প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের চাপে নুরুজ্জামান হয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী। মার্কা পান ‘দেয়ালঘড়ি’। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারলেও বিপুল ভোট পেয়ে দলের নজর কাড়তে সক্ষম হন তিনি।
পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আরো একবার দলীয় মনোনয়ন পান নুরুজ্জামান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে তা বিসর্জন দিতে হয় জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির কারণে। সেখানে মহাজোটের প্রার্থী হন জাতীয় পার্টির মো. মজিবর রহমান।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নুরুজ্জামান আওয়ামী লীগের টিকেট পান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে দশম সংসদে আসেন। আর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছরের মাথায় দায়িত্ব পান খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর।
স্বাভাবতই নুরুজ্জামানের এ সুখবরে আনন্দে ভাসছে তাঁর নির্বাচনী এলাকা কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার সাধারণ মানুষ।
কালীগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ শিক্ষক ও ভাষা সৈনিক মহেন্দ্র নাথ রায় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নুরুজ্জামান সংসদে নবীন হলেও বিভিন্ন অধিবেশনে তাঁর গঠনমূলক বত্তব্য সবারই নজর কেড়েছে। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেওয়া চমৎকার বক্তব্যের কারণেই তিনি নজর কেড়েছেন দলীয় প্রধানের। আর এই বক্তব্যই তাঁকে এনে দিল মন্ত্রিত্ব।’
একই মত ব্যক্ত করেন কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেফাজ রাঙা।
নুরুজ্জামানের ছেলে কলেজ শিক্ষক রফিকুজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘সততা ও ত্যাগের কারণেই বাবা এ মর্যাদা পেয়েছেন।’
অন্যদিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যদিও এ সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে তবুও কালীগঞ্জ-আদিতমারীর মতো অবহেলিত এলাকা থেকে নুরুজ্জামান আহমেদকে মন্ত্রী বানানোয় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। তবে যদি এলাকার উন্নয়নে নিবেদিতভাবে কাজ করেন তখনই তিনি আমাদের প্রশংসার দাবিদার হবেন।’
কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পান দোকানদার আবু তৈয়ব বলেন, ‘দলমত বুঝি না, আমাদের এলাকায় আমরা মন্ত্রী পেয়েছি আমরা তাতেই খুশি।’
কালীগঞ্জ-আদিতমারী উপজেলা মিলে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসন। কালীগঞ্জে বাড়ি নূরুজ্জামান আহমেদের। তুষভাণ্ডার আরএমএমপি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি এসএসসি এবং ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে যথাক্রমে এইচএসসি ও বিকম পাস করেন। বাবা প্রয়াত করিম উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। মূলত বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নুরুজ্জামানের।
আনন্দে ভাসছে কালীগঞ্জ
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার খবর এসে পৌঁছার সাথে সাথেই নুরুজ্জামানের বাড়ি কালীগঞ্জে দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। ইফতারের পর পরই বের হতে থাকে দফায় দফায় আনন্দ মিছিল। চলে মিষ্টি বিতরণ।