সুনামগঞ্জে যে হত্যাকাণ্ড পশুত্বকেও হার মানিয়েছে
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী বলেছেন, এর আগে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনোদিন শুনিনি। এই হত্যাকাণ্ড পশুত্বকেও হার মানিয়েছে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নিহত তুহিনের বাবা কৃষক আবদুল বাছিরের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। রোববার রাতে খাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন বাছির। রাত আড়াইটার দিকে পাশের কক্ষে থাকা বাছিরের এক ভাতিজি তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে তাদের ঘরের দরজা খোলা থাকার কথা জানান। এরপর সবাই জেগে ওঠে দেখেন তুহিন নেই। তখন প্রতিবেশীদেরও ডেকে তোলা হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশে রাস্তায় গিয়ে রক্ত দেখতে পান তারা। এরপর কিছুটা সামনে গিয়ে রাস্তার পাশেই একটি কদম গাছের ডালে তুহিনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। তার একটি কান বাড়ির পাশের সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে লাশটির গলা কেটে হাত বেঁধে বাড়ির পাশে মসজিদের সামনের একটি কদম গাছে ঝুলিয়ে রাখ হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি দুটি শিশু তুহিনের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে আটকে রাখা। ছুরি দুটির বাঁটে কলম দিয়ে সুলেমান ও সালাতুলের নাম লেখা রয়েছে। ওই দুই ব্যক্তি একই গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত শিশু তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির বলেন, ‘বেশ কিছুদিন থেকে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে আমার বিরোধ চলছিল। এ কারণে আমার ছেলেকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করবে এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’
আবদুল বাছির আরো বলেন, ‘আমার বড় ছেলে তার নানার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। আমি তুহিন ও আমার অন্য ছেলেকে নিয়ে রাতে এক বিছানায় ঘুমাতে যাই। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাতিজি ঘরের দরজা খোলা দেখে ডাকাডাকি করলে আমি জেগে দেখি আমার তুহিন নাই। পরে আমরা সবাইকে নিয়ে তার খোঁজ করতে থাকি। এর মধ্যে বাড়ির সামনের মসজিদের পাশের সড়কে রক্ত দেখতে পাই। পরে পাশের কদম গাছের সঙ্গে ঝুলানো লাশ দেখতে পাই।’
নিহত তুহিনের মামা নুরুজ্জামান বলেন, ‘ভোর ৪টার দিকে আমার বোন আমাকে ফোন দিয়ে বলে তুহিনকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি আমার ভাইকে নিয়ে আসি। এসে দেখি রাস্তায় রক্ত পড়ে রয়েছে। অন্যপাশে একটা কানও পড়ে ছিল। আমার ভাগ্নেকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি এর বিচার দাবি করেন।
নুরুজ্জামান আরো বলেন, ‘গ্রামের আনোয়ার মেম্বারের সঙ্গে বিরোধ আছে, তাই বলে এমনভাবে হত্যা করার কথা না। যে বা যারাই হত্যা করে থাকুক আমি মাসুম বাচ্চাটার হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।’
৩ নম্বর রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৌম্য চৌধুরী বলেন, ‘শিশু তুহিনের সঙ্গে যে জঘন্য আচরণ করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা হয়েছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সেইসঙ্গে দোষীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘বাচ্চাটাকে খুবই জঘন্য এবং বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক আমরা তাকে গ্রেপ্তার করব। এরই মধ্যে আমরা কয়েকটি আলামত পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমারা তা প্রকাশ করব না। তবে খুবই তাড়াতাড়ি অপরাধীদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের কাছ থেকে কেউ রেহাই পাবে না। আর এ ঘটনায় তো না-ই। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তবে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবাসহ সাতজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার রাতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় পাঁচ বছরের শিশুকে তুহিনকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটির লিঙ্গ ও কান কেটে, পেটে ছুরি মেরে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে লাশ গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। নিহত তুহিন গ্রামের আবদুল বাছিরের ছেলে।