ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে নিল বাবা, চাচা করল জবাই!
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে চাচা নাছির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. খালেদ মিয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা।
এর আগে শিশু তুহিন হত্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বাবা আবদুল বাছির এবং দুই চাচা আবদুল মছব্বির ও জমশেদ মিয়ার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বিকেলে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্তি সিনহা এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘(গত রোববার গভীর রাতে) ঘুমন্ত বাচ্চাটিকে তার বাবাই (আবদুল বাছির) কোলে করে বাইরে নিয়ে গেছে। যখন পর্যন্ত বাচ্চাটিকে জবাই করা হয়, তখন পর্যন্ত বাচ্চাটি মনে হয় কোলেই ছিল। বাচ্চাটির জন্য তো বাবার কোলের চেয়ে নিরাপদ জায়গা আর নাই। কোলে থাকা অবস্থায়ই বাচ্চার বাবা-চাচা সবাই মিলে তাকে জবাই করে। কান দুটো কাটা হয়েছে, গলা কাটা হয়েছে, লিঙ্গ কেটে দেওয়া হয়েছে, খুবই নির্মম। যে দুটি ছুরি পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাতে প্রতিপক্ষের নাম লেখা ছিল। ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে টানিয়ে রেখেছে।
বাচ্চার পেটে যে দুটি ছুরি বিদ্ধ ছিল, সেদুটির আঙুলের ছাপ নেওয়ার জন্য এবং ছুরি দুটিতে দুটি নাম লেখা ছিল তা হাতের লেখা বিশেষজ্ঞের কাছে আমরা পাঠাব। বিশেষজ্ঞের মত ও রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট এলে অতি শিগগিরই আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করব।’
শিশুটির পরিবার সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই বাবা (আবদুল বাছির) একটি হত্যা মামলার আসামি। শুধু এটাই না, বাবা আরো দুই-তিনটি মামলার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে একটি লুট মামলা রয়েছে, যেটিকে কেন্দ্র করে দুজন খুন হয়েছে। এই পরিবার আসলে ওই মামলার পক্ষে বিপক্ষের লোক।’
মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বা পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি, তার মধ্যে দুজন আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং আদালত তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। হত্যা পরিকল্পনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
হত্যার ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতেই শিশু তুহিনের মা মনিরা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গত রোববার গভীর রাতে দিরাইয়ের রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের বিভৎসভাবে পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে হত্যা করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। শিশুটির লিঙ্গ ও কান কেটে, পেটে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এলাকার মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড এর আগে কেউ দেখেনি।
ঘটনার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিশু তুহিনের বাবা আবদুল বাছির, চাচা আবদুল মছব্বির, জমশেদ মিয়া, নাছির ও জাকিরুল, তুহিনের চাচি ও চাচাতো বোনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পাঁচ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা নিয়ে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। ছবি : এনটিভি