জট খুলল মেহেরপুরের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের
মেহেরপুর সদর উপজেলা দরবেশপুর গ্রামে চাঞ্চল্যকর রোকুনুজ্জামান (৩৬) ও হাসানুজ্জামান (৪৪) জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরের দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জোড়া খুনের বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘চাঞ্চলকর এ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা এ হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আলমডাঙ্গার কুলপালা গ্রাম থেকে আব্দুল হাকিম ও তাঁর ছেলে আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া একই রাতে নতুন দরবেশ এলাকা থেকে তারাচাঁদ ফকির (৫০) এবং সোনাপুর গ্রাম থেকে মামলত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত হাকিম আদালতে স্বীকার করেন যে, তার আপন বড় ভাই আব্দুল হামিদের (যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, বর্তমানে জেল হাজতে) নির্দেশে স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের প্রতিশোধ হিসেবে রোকুনুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানকে হত্যার জন্য তাকে নির্দেশ দেন। পরে হাকিমের নির্দেশনা মোতাবেক হত্যার আগে তার আপন ভাগ্নে ইসমাইল হোসেন বাক্ককে নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে ওই দুজনকে হত্যা করার জন্য বলেন। মামার কথামতো বাক্ক সাত থেকে আটজন খুনি ভাড়া করে হত্যাকাণ্ড ঘটান।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মিশনে জড়িত আর এক আসামি আবুল কালাম কালুকে ৮ অক্টোবর বারাদী বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। সেইসঙ্গে ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করেন।
আসামি কালু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। কালুর তথ্য অনুযায়ী গত ১২ অক্টোবর গাংনী থানার হাটবোয়ালিয়া থেকে রনি আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রনিও এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
আসামি রনি আলী জানান, বাক্ক ও আরেকজন রোকুনুজ্জামানকে কোপাতে থাকে। এ সময় আরো দুজন রোকুনুজ্জামানের পা বুক চেপে ধরে রাখে। এ সময় রনি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। রনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে ১৪ অক্টোবর রনির তথ্যমতে, আসামি নুরুজ্জামান ও ফরিদ ফকিরকে (পান চোরা ফরিদ) মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন যে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যতম আসামি ইসমাইল হোসেন বাক্ক গত ৪ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেরপুর সদর উপজেলর নতুন দরবেশপুর পূর্বপাড়া আজিজুল হকের ধানক্ষেতে দরবেশপুরের শোলমারী বিলের ধারে রোকনুজ্জামান ও হাসানুজ্জামানকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আরো জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অন্য আসামিদের নাম ও পরিচয় এ মুহূর্তে গোপন রাখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ দারা প্রমুখ।