চিকিৎসকের কানের পর্দা ফাটালেন আ.লীগ নেতার ছেলে
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আখতার উজ জামান আকন্দকে হাসপাতালে ঢুকে মারধর করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। তিনি চিকিৎসককে চড় মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও পলাশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুমকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসক পেটানোর প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীসহ পুরো উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই মারধরের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনায় গুরুতর আহত ডা. আখতার উজ জামান আকন্দকে রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই এ ঘটনায় বিশ্বম্ভরপুর থানায় মামলা করেন ডা. আখতার উজ জামান। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর ছেলে সাঈদুর রহমান রাজিবকে আসামি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সোমবার সকালে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ইনজেকশন দেওয়ার জন্য যান পলাশ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ুম। তিনি ডা. আখতার উজ জামান আকন্দকে ইনজেকশনটি দেওয়ার জন্য বলেন। ইনজেকশন পুশ করতে নার্সরা দক্ষ জানিয়ে ডা. আখতার উজ জামান একজন নার্সকে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান কাইয়ুম জরুরি বিভাগে ইনজেশন দেওয়ার জন্য গিয়েও আবার ফিরে আসেন। তিনি চিকিৎসক ইনজেকশন দিতে বলেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গীরা চিকিৎসক আখতার উজ জামান আকন্দকে মারতে উদ্যত হন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর ছেলে সঙ্গীদের শান্ত করেন। এর কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান কাইয়ুমের ছেলে সাইদুর রহমান রাজিব আরো একজন সঙ্গী নিয়ে ডা. আখতার উজ জামানের ওপর হামলা করেন। রাজিব চড় মেরে চিকিৎসকের কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, পলাশ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম একটি ইনজেকশন দিতে এসেছিলেন। আখতার উজ জামান আকন্দ নার্সের কাছে গিয়ে ইনজেকশন পুশ করতে বলেন। এ নিয়ে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। এর কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যানের ছেলে সাইদুর রহমান রাজিব এসে ডা. আখতার উজ জামানের ওপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করেন। এ ঘটনায় ডা. আখতার উজ জামান আকন্দের কানের পর্দা ছিড়ে গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম দাবি করেন, চিকিৎসকরা ঠিকমতো ডিউটি করেন না। মাসিক সমন্বয় সভায় এসব কথা বলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুননবী জানিয়েছেন, ডা. আখতার উজ জামান আকন্দকে মারধরের মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুমকে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।