ইউএনওর সান্ধ্যভ্রমণে ‘বাধা’, চালককে পিটিয়ে হাসপাতালে!
গাড়িকে সাইড দিতে দেরি হওয়ায় বাসচালককে বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত চালক নূরুজ্জামানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কের কারবালারদীঘি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে কালীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান নিজের হাতে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাগের বশে তাঁর চালক চড়-থাপ্পড় মেড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান ইউএনওর সরকারি গাড়িতে করে সপরিবারে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তিস্তা ব্যারাজ এলাকায়। পথে পারুলিয়া বাজারে হাতীবান্ধাগামী নাবিলা পরিবহনের বাসটি খারাপ রাস্তার কারণে সাইড দিতে কিছুটা দেরি করে।
কিছুটা সামনে গিয়ে কারবালারদীঘি এলাকায় বাসটি ইউএনওর গাড়িটিকে সাইড দেয়। এ সময় হঠাৎ বাসটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ইউএনও গাড়িটি। এতে চালক বাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তা সামনে থাকা ইউএনওর গাড়িটিতে সামান্য ধাক্কা দেয়।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত ভারপ্রাপ্ত ইউএনও, তাঁর গাড়িচালক আনোয়ার হোসেন সাজ এবং কালীগঞ্জ ভূমি কার্যালয়ের একজন সহকারী বাসে উঠে গাড়ি পরিষ্কারের ব্রাশ দিয়ে পেটানো শুরু করেন বাসচালক নূরুজ্জামানকে। একপর্যায়ে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়েও আনা হয় এবং আধাঘণ্টা ধরে পেটানো হয় বলে অভিযোগ করেন নাবিলা পরিবহনের সুপারভাইজার দিপু।
এনটিভি অনলাইনকে সুপারভাইজার বলেন, ‘আদিতমারী থেকে হাতীবান্ধা আসার পথে কালীগঞ্জের ইউএনওর গাড়িটিকে সাইড দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সেখানে থাকা ভারপ্রাপ্ত ইউএনওসহ তিনজন মিলে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটায় আমার বাসের চালককে। ঘটনায় হতভম্ব হয়ে আমি নিজেকে রক্ষা করতে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।’
কারবালারদীঘি এলাকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাসচালকের কোনো দোষ ছিল না। ইউএনওর গাড়িটিই ভুল করেছে এবং বাসচালককে অমানুষিকভাবে পিটিয়েছে।
এ ঘটনায় ওই সড়কে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরবর্তী সময়ে ব্যারাজ থেকে ফেরার পথে ‘হাতীবান্ধা ফিলিং স্টেশন’ এলাকায় আবারো দেখা হলে বাসটিকে আটকান ভারপ্রাপ্ত ইউএনও। হাতীবান্ধা পুলিশকে ডেকে পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে কালীগঞ্জের দিকে চলে যান তিনি।
স্থানীয় লোকজন আহত বাসচালককে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাসচালক নূরুজ্জামানের পিঠে দগদগে ক্ষতের চিহ্ন। ব্যথায় তিনি ছটফট করছেন।
বাসচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘পেছন থেকে ইউএনওর গাড়িটি সাইড চাইলে খারাপ রাস্তার কারণে প্রথমে তা দিতে পারিনি। কিছুদূর এগিয়ে সাইড দেওয়ার পর পরই ওই গাড়িটি আকস্মিক আমার বাসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। এতে চলন্ত বাসটি ব্রেক করতে গিয়ে সামান্য ধাক্কা লাগে ওই গাড়িটিতে। আর এ অপরাধে আমাকে প্রচণ্ডভাবে পেটানো হয়।’
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন ওই চালককে নিয়ে আসেন। তাঁর শরীরে জখমের দাগ রয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন ভালো আছেন।
এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার ড্রাইভার রাগের বশে কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দিয়েছে মাত্র।’