শিগগিরই ভোটার হচ্ছেন ছিটমহলবাসী
ছিটমহলবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু হবে। আজ শুক্রবার মধ্যরাতে ছিটমহল চুক্তি বিনিময় বাস্তবায়ন হচ্ছে।
সেখানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র অনু বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, সেখানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় সবকিছু প্রস্তুত রাখা আছে। চুক্তি বিনিময় বাস্তবায়িত হলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। তার পর সেখানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করা হবে। সীমানা ঠিক না করা হলে তাঁদের কোথায় ভোটার বানাব?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নের পর এর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তার পর কমিশন সভায় উঠবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কবে থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু করা হবে। খুব শিগগির এ কাজ শুরু করা হবে।’
বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী আজ শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ১৬২টির মধ্যে ১১১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা বাংলাদেশ ও ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতের নাগরিত্ব পাচ্ছেন।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার টি এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলে প্রায় ১৭ হাজার ১৬০ একর জমির মালিক হবে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার অধীনে ১৮টি ও লালমনিরহাট জেলার অধীনে ৩৩টি। এগুলো ভারতের কোচবিহার জেলার প্রশাসনিক সীমানার ভেতরে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি ও নীলফামারীতে রয়েছে চারটি।
চলতি বছরের ৬ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত যৌথ জনগণনা অনুযায়ী ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলই ভারতের কোচবিহারে।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের হয়ে যাবে। বাংলাদেশের ছিটমহল ভারতের হয়ে যাবে। এসব ছিটমহলের নাগরিকরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী দেশ বেছে নিতে পারবেন। যাঁরা পুরোনো আবাসস্থল বদলে ভারতে চলে যেতে চান, তাঁরা সেখানে যেতে পারবেন আগামী ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
ইসি সূত্রে জানা যায়, তারা এর আগে ছিটমহলবাসীর ছবিসহ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছিল ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১২ ও ২০১৪ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি প্রক্রিয়াধীন থাকায় মন্ত্রণালয় দুটি সম্মতি দেয়নি।
গত ৬ জুন ঢাকায় দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির দলিল হস্তান্তরিত হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে যার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে।