বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলা, চরম দুর্ভোগ
গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বসতবাড়িতেও হাঁটু সমান পানি ঢুকে শহরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, অন্যদিকে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শহরের মানুষ।
একইভাবে জেলার ১১টি উপজেলা সদর ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এর ফলে জেলায় কয়েক লাখ মানুষ এখন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি আঞ্চলিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায়, সুনামগঞ্জ সদরের সঙ্গে তিন উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ১১টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দিয়েছে। একইসঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় ৪১০ মেট্রিক টন চাল এবং ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
এর আগে ২০০৪ সালে সুনামগঞ্জ শহরে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এর ১৬ বছর পর আবার সুনামগঞ্জ শহরের বেশিরভাগ এলাকায় অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের মূল রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের বসত ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে শহরের তেঘরিয়া, বড়পাড়া, ঘোলঘর, নবীনগর, পশ্চিমবাজার ও হাছননগর ওয়েজখালির কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একইভাবে জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর দোয়ারাবাজার, ছাতকসহ ১১টি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। একইভাবে শহরের নবীনগরে স্রোতের তোড়ে কালভার্ট ভেঙে গিয়ে ওই এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। এতে করে জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসীর হাসান পলাশ জানান, চামারদানি ইউনিয়নের বন্যায় আক্রান্ত আটটি পরিবারকে একটি মাদরাসায় আশ্রয় দিয়ে তাদের চাল, ডালসহ খাবার দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ও থানা এলাকাতেও পানি উঠছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমীর বিশ্বাস। তিনি বলেন, তাঁর বাসার নিচ তলাতেও পানি উঠেছে।
তবে বন্যা কবলিত সুনামগঞ্জ জেলায় প্রশাসন চার হাজার ৭৫২টি পরিবারের মধ্যে শিশুদের জন্য খাদ্য বরাদ্দ দিয়েছে। এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯০ মিলিমিটার, যা গত শুক্রবার ছিল ১৫৩ মিলিমিটার। সুরমা নদীর পানি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যাদুকাটা নদীর পানি ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
মো. সাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভারতের চেরাপঞ্জিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে আর সে বৃষ্টি আমাদের নদ-নদীতে এসে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। গত শুক্রবার ভারতের চেরাপঞ্জিতে ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯০২ মিলিমিটার।
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘সারা দিন পৌর এলাকায় ঘুরে দেখেছি, শহরের অর্ধেক বাড়িঘরে ও দোকানে পানি উঠেছে।’
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার বিকেলে জেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্ত, শামীমা শাহরিয়ার ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জয়নুল বারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসক জানান, প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র ও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ৪১০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলাগুলোয় ৪৭৫২টি পরিবারের মধ্যে শিশু খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।