সুনামগঞ্জে বন্যায় ৯২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি, ভোগান্তিতে মানুষ
সুনামগঞ্জে তৃতীয় দফার বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। তবে এখনো অনেক আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে পানি রয়ে গেছে। প্রথম দুই দফার বন্যায় জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক-দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর এবং পৌরশহরের পাশের নবীনগর-ধারারগাঁও সড়কপথে টানা দেড় মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ পাঁচ উপজেলার মানুষ সড়ক যোগাযোগ করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এগারো উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সড়ক ও জনপথের সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শুধু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৯০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে জেলার মোট ২২টি স্থানে স্রোতের তোড়ে সড়ক ভেঙে গিয়ে সড়কপথের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৪০টি ব্রিজ ও কালভার্টের সংযোগস্থলের ক্ষতি হয়েছে এবং হাওরপাড়ে ঢেউয়ে অন্তত ৩০টির বেশি ভিলেজ প্রটেকশন লাইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে, কোনোটি আবার পুরো ভেঙে গেছে। এর ফলে কয়েক দফায় নৌকাসহ মোটরসাইকেল দিয়ে ভেঙে ভেঙে যাওয়া-আসায় ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি খরচও বেশি হচ্ছে। টানা দেড় মাস বন্যা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভোগান্তির চরম পর্যায়ে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলায় মোট ৯০০ কিলোমিটারের মতো গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো তৃতীয় দফায় সব জায়গা থেকে পানি না নামায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। বন্যার পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে এখন পর্যন্ত সড়কগুলোতে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে সড়ক মেরামত বাবদ অন্তত ৪০০ কোটি টাকা লাগবে।
কাটাখালী এলাকার ব্যবসায়ী মোখলেছ মিয়া (৪৫) জানান, ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ সদরে যেতে পাঁচ জায়গায় ভাঙনের ফলে ভেঙে ভেঙে যেতে হয়। এতে করে আগে যেখানে ১০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে আসা-যাওয়া করা যেত, এখন সেখানে খরচ হচ্ছে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। এতে করে ভোগান্তিও হচ্ছে।
একই এলাকার গফুর মিয়া (৫০) জানান, প্রথম দফার বন্যার স্রোতে পানিতে কাটাখালী ব্রিজের সঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ ফুট এলাকা ভেঙে গেছে। এতে স্বাভাবিক চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়িঘরে কোমরপানি থাকার পরও গবাদিপশু নিয়ে কোথাও যেতে পারেননি। তাই দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জেলায় পরপর তিন দফা বন্যায় অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘এলজিইডির মোট চার হাজার ৬৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক আছে। তার মধ্যে গত দুই দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তৃতীয় দফা বন্যা শুরু হওয়ার পর গতকাল রোববার পর্যন্ত জেলার প্রায় ৯০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এখনো বেশির ভাগ সড়কে বন্যার পানি থাকায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। পানি নেমে গেলে সঠিকভাবে বলা যাবে, আরো কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যে ক্ষতি হয়েছে, টাকার পরিমাণে তা ঠিক করতে ৪০০ কোটি টাকার মতো লাগবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে সার্বক্ষণিক অবগত করছি। আমরা বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করব। কারণ, মানুষ খুব ভোগান্তিতে আছেন।’
সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ, ছাতক, জগন্নাথপুর ও দিরাই পৌরশহর এলাকায়ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি সড়কের ওপর থাকায় সড়কের বিটুমিন উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বালু ও পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের গত দুই দফা বন্যায়ই শুধু ২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। সেখানেও প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।