শিল্পকলায় ‘হীরালাল সেন স্মারক বক্তৃতা ২০১৫’
উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রকার হীরালাল সেনের সম্মানে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ প্রবর্তিত ‘হীরালাল সেন স্মারক বক্তৃতা ২০১৫’-এর আয়োজন করা হয়েছে। বাৎসরিক এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজনে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ সবসময় দেশ এবং বিশ্বচলচ্চিত্রের চিন্তা ও প্রবণতাগুলোর বিশ্লেষণমূলক বিষয়কে প্রাধাণ্য দিয়ে থাকে; সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরের বক্তৃতার বিষয় ‘চলচ্চিত্রে প্রতিবাদ এবং নির্মাণশৈলীর নতুনত্ব : বাংলাদেশের রাজনৈতিক চলচ্চিত্র’। এ বছরের হীরালাল সেন স্মারক বক্তৃতার বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় ‘হীরালাল সেন স্মারক বক্তৃতা ২০১৫’ আজ ১০ অক্টোবর, শনিবার, বিকেল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।
স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অগ্রজ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী মাহবুব জামিল এবং অগ্রজ চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক আলোচনা ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মুনিরা মোরশেদ মুন্নি ।
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রসারের কারণে অনেকে মনে করেন চলচ্চিত্রে বিনোদনমূলক উপাদান থাকা অত্যন্ত জরুরি, আর আনন্দময় উপাদান না থাকলে একটি ছবি কখনোই বহু মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করবে না। কিন্তু বিভিন্ন দেশে অনেক চলচ্চিত্রকার বাণিজ্যিক ছবির এই মূলনীতি উপেক্ষা করে ছবি তৈরি করেছেন। কখনো সেই ছবিতে প্রাধান্য পেয়েছে নির্মাণশৈলীর নান্দনিকতা, যার মাধ্যমে বৃদ্ধি পেয়েছে ছবির শৈল্পিক উৎকর্ষ। আবার কখনো অনেক পরিচালক চলচ্চিত্র ব্যবহার করেছেন রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে। এই ধরনের ছবি সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বিনোদনধর্মী ছবির বক্তব্য আর নির্মাণপদ্ধতি, যার মধ্য দিয়ে এই ছবিগুলো হয়ে উঠেছে প্রথাবিরোধী। গতানুগতিক এবং জনপ্রিয় নির্মাণশৈলী সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্তটি বহন করে রাজনৈতিক তাৎপর্যও। পাশাপাশি এই ধরনের চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুতেও উঠে আসে পরিচালকের রাজনৈতিক বক্তব্য, কখনো তা খোলাখুলি এবং কখনো পরিচালক তা প্রদান করেন রূপকের সাহায্যে, অপ্রত্যক্ষভাবে।
বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি আর শোষণের বিরুদ্ধে নিজের সমালোচনা প্রকাশের জন্য পরিচালক ব্যবহার করেন নতুন এবং নান্দনিক চলচ্চিত্র ভাষা— যেন দর্শক বুঝতে পারে এমন ছবির গতানুগতিকভাবে বিনোদন প্রদানের আগ্রহ নেই, বরং দর্শককে সঠিক সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। ফর্ম আর কনটেন্ট দুই দিক দিয়েই প্রভাবশালী মতাদর্শ কেন্দ্রিক চর্চার বিরোধিতা করার জন্য এই ধরনের ছবি হয়ে ওঠে প্রথাবিরোধী ও রাজনৈতিক।
বাংলাদেশে গত ৪৪ বছরে বাণিজ্যিক ইন্ডাস্ট্রির বাইরে প্রথাবিরোধী ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিচালকদের সাফল্য কতটা তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা প্রথাবিরোধী ছবি বিশ্বে পরিচিত। প্রশ্ন থাকে যে নান্দনিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় এবং রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী চলচ্চিত্র বাংলাদেশে কতটা গুরুত্বের সাথে গত চার দশকে তৈরি করা হয়েছে? আমাদের দেশে তৈরি এই ধরনের ছবির নির্মাণশৈলী কি যথেষ্ট প্রথাবিরোধী হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে? বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের পীড়িত করেছে বিভিন্ন সময়। সমাজে টিকে থাকা রাজনৈতিক এবং সামাজিক অসঙ্গতিগুলোর মূল কারণ সম্পর্কে দর্শকদের সচেতন করে তোলার কতটা আন্তরিক প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ করেছি বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রে? বর্তমান বক্তৃতায় এই প্রশ্নগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হবে। আশা করা যায় এই আলোচনা আরো বিভিন্ন প্রশ্ন সৃষ্টি করবে এবং তৈরি করবে বাংলাদেশি প্রথাবিরোধী ও প্রতিবাদী চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্লেষণের আগ্রহ।