সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা
সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের একজন অস্থায়ী কর্মী বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় জেলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক অখিল কুমার সাহাসহ ওই কার্যালয়ের সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. হেমায়েত হোসেন বিশ্বাস, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল বাসেদ, প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মনোয়ার হোসেন, কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, কর্মচারী (লাইনম্যান) মুরাদ হোসেন।
সুনামগঞ্জ সদর আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১৯ নভেম্বর মামলাটি করেছেন সদর উপজেলার গোধারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম। তাঁর ছেলে মো. পাভেল মিয়া (২১) বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রায় আড়াইমাস ধরে চিকিৎসাধীন আছেন।
আদালতের বিচারক মামলাটি এজহার হিসেবে নিতে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মোহাম্মদ এনামুল হক।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সর্দারপুর গ্রামের এনামুল হকের বাড়িতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাভেল মিয়া একটি সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তাঁর ছেলে মো. পাভেল মিয়া গত এক বছর ধরে সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন। তিনি গ্রাহকদের নতুন বৈদ্যুতিক মিটার লাগানোর কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক অখিল কুমার সাহার নির্দেশেই তিনি এই কাজ করতেন। ঘটনার আগের দিন অখিল কুমার সাহা ও মুরাদ হোসেন সর্দারপুর গ্রামে এনামুলের বাড়িতে একটি মিটার লাগানোর দায়িত্ব দেন পাভেল মিয়া ও ফারুক মিয়াকে। পরের দিন তারা দুজন ওই গ্রামে মিটার লাগাতে যান। পাভেল মিয়া মিটারটি বোর্ডে স্থাপন করার পর সংযোগ দিতে খুঁটিতে ওঠার আগে লাইনম্যান মুরাদ হোসেনের কাছে মুঠোফোনে লাইনে বিদ্যুৎ আছে কি না জানতে চান। বর্তমানে লাইন বন্ধ আছে জানিয়ে পাভেলকে কাজ করতে বলেন মুরাদ। তাঁর আশ্বাসে পাভেল খুঁটিতে ওঠে মেইন লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় ফারুক মিয়াসহ অন্যরা তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতলে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর ও রাতেই ভর্তি করা ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে তিনি সেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
মামলার এজহারে বাদী আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার পরের দিন সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে গিয়ে জানান, পাভেল মিয়া অবৈধভাবে একটি সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। এ বিষয়ে তাদের একটি লিখিত দেওয়ার জন্য হুমকি দেন কর্মকর্তারা।
আবুল কালাম বলেন, ‘আমার ছেলে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ দিতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। কিন্তু শুরু থেকে সমিতির কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। চিকিৎসকেরা বলেছেন পাভেলের শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাঁর চিকিৎসায় এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এজন্য ঋণ করতে হয়েছে। আমি এখন অসহায় অবস্থায় আছি।’
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক অখিল কুমার সাহা বলেন, ‘পাভেল মিয়া নামে আমাদের কোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী কর্মী নেই। তাঁকে আমি চিনিও না। তবে বিষয়টি কীভাবে ঘটল, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মামলার বিষয়টি আমি শুনেছি।’