দিনাজপুরে মৃৎশিল্পে দুর্দিন, পেশা বদলাচ্ছে অনেকে
পাকিস্তান আমলে গড়ে ওঠা দিনাজপুর পৌরসভার মহারাজা মোড়ে ২৫ থেকে ৩০টি পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠে কুমারপাড়া। এক সময় দিনাজপুর জেলার মানুষের চাহিদা পূরণ করে দেশের বাহিরেও রপ্তানি হতো এখানকার মাটির জিনিসপত্র। তখন কুমারপাড়ার দিন যেতো দুধে-ভাতে। তবে এখন শুধুই হতাশার অন্ধকার। আর সুদিন ফিরবে কি না তা তারা জানে না। তবু আশা বেঁধে রাখা।
বর্তমানে দিনাজপুরের মৃৎশিল্পে চলছে চরম দুর্দিন। সময়ের বিবর্তনে প্রায় সব পরিবার তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। টিকে থাকা পরিবারগুলো তাদের বাবা-দাদার পেশা হওয়ায় মৃৎশিল্পকেই আপন করে নিয়েছেন। হয়তো তারাও একদিন এই পেশা ছাড়তে বাধ্য হবেন বলে জানালেন কুমার জগন্নাথ পাল। তিনি বলেন, ‘আগে বেচাবিক্রি ভালো ছিল। মাটিও পাওয়া যেত সব সময়। কিন্তু এখন মাটি পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার পাওয়া গেলেও এক টলি (ছোট গাড়ি) মাটি কিনতে হয় দেড় হাজার টাকায়। তার ওপর কর্মচারী পুষিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্মচারী না থাকায় পরিবারের লোকজন নিয়ে কাজ করতে হয়। এতকিছুর পর এই পেশায় টিকি থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
অপর এক কুমার রাম চন্দ্র বলেন, ‘করোনাকালীন বিক্রি একদম বন্ধ ছিল। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করেছি, কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই। এমনও দিন গেছে যে, না খেয়ে থাকতে হয়েছে।’
রামচন্দ্র আরো বলেন, ‘আগে অনেক পরিবার এই কাজ করত। কিন্তু এখন আমরা দুটি পরিবার ছাড়া বাকিরা অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। সারা দেশে করোনার সময় প্রণোদনা পেয়েছে। সবাই করোনার মধ্যেও প্রণোদনার টাকায় ব্যবসা চালিয়ে নিয়েছে। কেউ সেভাবে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হননি। তবে মৃৎশিল্পের সঙ্গে আমরা যারা জড়িত রয়েছি, আমাদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আগের থেকে হাড়ি, টব, পুতুলসহ সব ধরনের মাটির জিনিসের দাম একটুও বাড়েনি বরং কমেছে। এতে আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
রামচন্দ্র অভিযোগের সুরে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি প্রণোদনা এবং চার শতাংশ সুদে আমাদের ঋণ দেওয়া হোক। মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা কোনোদিনই সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পায় না। এই ঋণের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হলে এই শিল্প টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তা না হলে এই শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’