লাখপতির গল্প
নারীর মন জয় করেছে জয়ার ‘পরিধান শৈলী’
বাংলাদেশের তাঁতের শাড়িকে আরও জনপ্রিয় করে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অনলাইন শপ ‘পরিধান শৈলী’ গড়ে তোলেন রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া। যাত্রা শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে। শুরুতে তেমন না পেলেও এখন খুব ভালো সাড়া পাচ্ছেন। তাঁতের শাড়ির চাহিদাও বাড়ছে। আর অনলাইন শপ দিয়েই লাখপতি বনে গেছেন এ তরুণী।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সেই শুরু থেকে লাখপতি বনে যাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া। বলেছেন তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনের গল্প।
কুশল জানতেই জয়ার উত্তর, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ব্যস্ত আছি নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স নিয়ে লেখাপড়া এবং আমার উদ্যোগ পরিধান শৈলীকে নিয়ে।’
টাঙ্গাইল সুতি ও হাফসিল্ক শাড়ির পাশাপাশি জয়া কাজ করছেন শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট ব্লাউজ পিস এবং দেশি শাল নিয়ে। জয়ার এ সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) ফেসবুক গ্রুপের। শুধু এ গ্রুপেই তিনি দেড় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন।
জয়া বলেন, ‘উই-এর ফেসবুক গ্রুপ আমার জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। শুধু দেশি পণ্যের প্রচারণার দিকে উই গ্রুপ ফোকাস করছে। আর তাই উই-এর কারণে আমি দেশি তাঁতের শাড়ি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। দেশি শাড়ির ব্র্যান্ড হিসেবে পরিধান শৈলীকে দাঁড় করানোর আমার যে স্বপ্ন ছিল, সেটা বাস্তবায়নের ব্যাপারে এখন আমি আশাবাদী শুধু উই-এর কারণে। এ ছাড়া ই-কমার্স বিজনেস-সংক্রান্ত সব ধরনের বেসিক নলেজ, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং, কাস্টমার সার্ভিস-সংক্রান্ত সব বিষয় আমি উই-এর মাধ্যমে শিখে নিজের বিজনেসে কাজে লাগাতে পারছি।’
উদ্যোক্তা হতে কারা অনুপ্রেরণা ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এনটিভি অনলাইনকে রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জিং। সম্পূর্ণ নিজের শ্রম, সময় ও মেধার মাধ্যমে একটি উদ্যোগ দাঁড় করানো অনেক সম্মানের। এই চ্যালেঞ্জিং ও সম্মানের কাজটি বেছে নেওয়াটা আমার জন্য খুব আনন্দ ও গর্বের ব্যাপার। এ কাজে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার মা এবং ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রাজিব আহমেদ স্যার।’
তো শাড়ির মান কীভাবে রক্ষা করেন জয়া? বললেন, ‘দেশি সুতি ও হাফসিল্ক শাড়ির প্রতি আমার অন্যরকম ঝোঁক। আমি নিজেই এই শাড়িগুলো ব্যবহার করি। আমি নিজে যে মানের শাড়ি ব্যবহার করি, ঠিক সেই মানের শাড়িগুলোই আমি পরিধান শৈলীতে আনি। এমনকি আমার পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়রাও এসব শাড়ি ব্যবহার করে। মানের দিক থেকে আমি কোনো ধরনের আপস করি না। নিজে বেছে সেরা মানের শাড়িগুলো নিয়ে আসি এবং আমার তাঁতিদেরও মানের ব্যাপারে সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছি ।’
জয়ার ভাষ্যে লাখপতির গল্প, ‘আমি লাখপতি হয়েছি। আমার মতে লাখপতি হতে কিংবা নিজের উদ্যোগের যেকোনো সফলতার জন্য ধৈর্য ধরে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে চেষ্টা করতে হবে। হতাশ হলে চলবে না। মনোবল ধরে রেখে নিজের উদ্যোগের জন্য পরিশ্রম করতে হবে এবং নিজের বেসিক স্কিল ডেভেলপমেন্টের পেছনে সময় ব্যয় করতে হবে। তাড়াহুড়ো না করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। শুধু বিক্রির ব্যাপারে ফোকাস না করে নিজের উদ্যোগটিকে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
জয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দেশি পণ্যের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখা এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান পরিধান শৈলীকে দেশি তাঁতের শাড়ির ব্র্যান্ড হিসেবে দেশে ও বিদেশে পরিচিত করা। তাঁর উদ্যোক্তা-জীবন তিন বছরের। একাই এ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ভবিষ্যতে কর্মী নিয়োগ করে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আছে তাঁর।