বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বৃদ্ধি ও যৌথ গবেষণার প্রস্তাব
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবের জিজান প্রদেশে অবস্থিত জিজান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর অধ্যাপক ড. মারেই বিন হুসেইন আল কাহতানির সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জিজান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথভাবে গবেষণা সম্পাদন, শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রম এবং আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিসংখ্যা বৃদ্ধিরও অনুরোধ জানান।
রেক্টর এ প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রমে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি রাষ্ট্রদূতকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশি-বিদেশি সবার জন্য উন্মুক্ত বিধায় মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সহজেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
রেক্টর রাষ্ট্রদূতকে জানান যে চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়া অন্য সব অনুষদ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। রেক্টর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ও আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়টি অবহিত করেন। এ ছাড়াও আগামী বছর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষা ও আরবি ভাষা শিক্ষা বিষয়ে পিএইচডি চালু করা হবে বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর কাহতানি জানান, জিজান বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, যার বেশিরভাগই নারী শিক্ষার্থী। ৩৭টি দেশের শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যয়ন করছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদে তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষক রয়েছে যার মধ্যে ২১ জন বাংলাদেশের। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বর্তমানে নয়জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে ও পাঁচজন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেছে।
এ ছাড়া রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গতকাল সৌদি আরবের জাজান প্রদেশের পুলিশ প্রধান মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ বিন মিসফার আল জুহাইরিথির সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী জিজান, নাজরান, বিশা ও আভাসহ এলাকায় বসবাসরত প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশ প্রধান মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ বিন মিসফারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। পুলিশ প্রধান এ অঞ্চলে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সৌদি আরবের আইন-কানুন ও বিধিবিধান মেনে চলা এবং অপরাধমূলক কার্যক্রমে খুবই কম পরিমাণে জড়িত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁদের প্রশংসা করেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশসহ সব মুসলিম রাষ্ট্রের জনগণের হজ-উমরাহসহ অন্য যেকোনো সময়ে সার্বিক সেবা করাকে অনন্য সুযোগ বলে অবহিত করেন। বাংলাদেশিদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে ও নিরাপত্তা প্রদানে তাঁর বাহিনী সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে বলে অবহিত করেন। পুলিশ প্রধান জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধ বিষয়ের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণের অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে অনুরূপ একটি ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করবেন মর্মে উল্লেখ করেন।
বৈঠক শেষে পুলিশ প্রধান বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপত্তা বিধানকল্পে তাঁর বাহিনী সদা সচেষ্ট থাকবে উল্লেখ করে দুটি ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের বন্ধুত্ব এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে পুনরায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠককালে জেদ্দার দায়িত্বপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম আনিসুল হক ও রিয়াদ দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সেলর মুর্তুজা জুলকার নাঈন নোমান উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রদূত গতকাল রাতে জাজান প্রদেশে বসবাসরত বিভিন্ন পেশার বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে অনলাইনে মতবিনিময় করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি অভিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তা সমাধানের আশ্বাস দেন।