ফ্রান্সে আবার হামলা কেন?
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হামলায় ১৫৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ২০০, যার মধ্যে ৮০ জনের অবস্থা গুরুতর। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে প্যারিসের ছয়টি স্থানে প্রায় একই সময়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং বন্ধুকধারীরা হামলা করে। তবে এই হামলা ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে একেবারেই ‘অপ্রত্যাশিত’ ছিল না। যেকোনো সময় জঙ্গি হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কা তাদের মধ্যে আগে থেকেই ছিল।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ফ্রান্সে বারবার হামলার কারণ নিয়ে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন করেছে। পত্রিকাটির মতে, বর্তমানে প্রতিটি পশ্চিমা দেশের রাজধানীতেই জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে। তবে প্যারিসের মতো শহরে হামলার আশঙ্কা বেশি। কেন? সহজ উত্তরটি হলো, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়ছে ফরাসি সেনা। তবে, ইউরোপের মধ্যে সর্বাধিক মুসলমানের বাস এই ফ্রান্সেই। এখানে সমাজও বিভিন্নভাবে বিভক্ত। এ ছাড়া আরো অনেক কারণ আছে যে জন্য জঙ্গিদের হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ফ্রান্স। এ কারণেই শার্লি এবদোতে হামলার পর ফ্যান্সের প্যারিসে এমন হামলার ঘটনা ঘটল।
প্যারিসে হামলার শিকার এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, একজন হামলাকারী চিৎকার করে বলছিল, ‘এটি সিরিয়ার জন্য।’ টেলিগ্রাফের মতে, ওই হামলাকারী সিরিয়ার বদলে মালি, লিবিয়া, ইরাকও বলতে পারত।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ১০ হাজার ফরাসি সেনা মোতায়েন আছে। এর মধ্যে তিন হাজার পশ্চিম আফ্রিকায়, দুই হাজার মধ্য আফিক্রায়, সাড়ে তিন হাজার ইরাকে। মালিতে আল-কায়েদার শাখা আল-কায়েদা ইন দি ইসলামিক মাগরেবের সঙ্গে লড়ছে ফরাসি সেনারা। এ ছাড়া ইরাকেও আছে ফরাসি সেনা। আর গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ উপসাগরে বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে লড়তেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্স।
তবে দেশের মধ্যকার কোনো কারণেও প্যারিসে হামলা হতে পারে। ফ্রান্সের মুসলমানদের আদর্শ হিসেবে কয়েকজন মুসলিম ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদকে দেখানো হয়। তবে দেশটিতে অধিকাংশ মুসলমানই নিজেদের আলাদ হিসেবে দেখেন। দেশটিতে বোরকা নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে উত্তেজনাই বাড়িয়েছে।
ফ্রান্সের কারাগারকে জঙ্গিবাদের উদ্বুদ্ধ করার একটি উপযোগী স্থান। এর আগে কয়েকটি হামলায় অংশ নেওয়া অনেকেই সন্ত্রাসবাদের দীক্ষার শুরুটা হয় ফ্রান্সের কারাগারে।একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ জানায়, দেশটির কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশই মুসলমান। তবে সংখ্যাটি অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয় কারণ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ফ্রান্স কোনো ব্যক্তির ধর্ম সম্পর্কে তথ্য রাখে না। যুক্তরাজ্যের কারাগারের মুসলিম বন্দির সংখ্যা মাত্র ১৪ শতাংশ। যেখানে দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মুসলমান।
শার্লি এবদোতে হামলার পর পরই টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কারাগারে চরমপন্থী মতবাদ ছড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে। তবে প্রায় এক বছর কেটে গেলেও এই ব্যাপারে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি ফ্রান্স।
ফ্রান্সে হামলার জন্য জঙ্গিদের অস্ত্র জোগাড়ের কাজটিও সহজ। দেশটির সঙ্গেই বেলজিয়ামের সীমান্ত। বেলজিয়াম দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমস্যায় আছে। এ ছাড়া যে কোনো বলকান রাষ্ট্র থেকেও ফ্রান্সে সহজে অস্ত্র পাচার করা যায়।