করোনাজয়ী সেই মা ও ছেলেকে সংবর্ধনা
করোনায় আক্রান্ত মাকে বাঁচাতে পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া সেই মা ও ছেলেকে সংবর্ধনা দিয়েছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা প্রশাসন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
মা স্কুলশিক্ষিকা রেহেনা বেগম ও ছেলে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিটুর হাতে ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিদ্দিকুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সেই মা ও ছেলে। বিষয়টি মিডিয়ায় তুলে ধরায় কৃতজ্ঞতা জানান সাংবাদিকদের প্রতি।
গত ৯ এপ্রিল রেহানা বেগমের করোনা শনাক্ত হলে নলছিটির সূর্যপাশা বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ১৭ এপ্রিল দুপুরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন চিকিৎসকরা। লকডাউনের মধ্যে কোনো গাড়ি না পেয়ে সংকটাপন্ন মায়ের জীবন বাঁচাতে জিয়াউল হাসান টিটু নিজের শরীরে সিলিন্ডার বেঁধে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে মোটরসাইকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি তুলে এক পুলিশ সদস্য ফেসবুকে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। হাসপাতালে মায়ের সেবাযত্ম করেছেন দুই ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু ও রাকিবুল হাসান ইভান। ছয় দিন চিকিৎসা শেষে সুস্থ অবস্থায় মাকে নিয়ে ২৩ এপ্রিল সকালে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
এদিকে মা সুস্থ হলেও করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন ছেলে টিটু। ২৪ এপ্রিল নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। ১৫ দিন বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে ৯ মে সুস্থ হন তিনি।
এ ঘটনা নিয়ে দেশ ও বিদেশের মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারিত হয়। করোনাজয়ী সেই মা ও ছেলেকে সংবর্ধনা দিলেন উপজেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার কে এম সবুজ, ঝালকাঠি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আল আমিন তালুকদার, সাংবাদিক অলোক সাহা ও মিলন কান্তি দাসসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এনটিভি অনলাইনে এই সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তাই অনুষ্ঠানে এনটিভিকে অশেষ ধন্যবাদ জানান মমতামীয় মা রেহেনা বেগম ও ছেলে টিটু।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষিকা রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমি প্রতি বছর বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে তাদের বলি সব সময় বাবা-মায়ের দিকে খেয়াল রাখবে। হয়তো সেই উপদেশটা আল্লাহতায়ালা আমার ছেলেদের ওপর কবুল করেছেন। আমার ছেলেরা যেভাবে আমাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন, আশা করব সব বাবা-মায়ের সন্তান এমনিভাবে কাজ করে যাবে। সন্তানদের কাছে বাবা-মায়ের এটাই প্রত্যাশা। আমার সন্তানদের জন্য দোয়া করবেন সবাই।’
জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, ‘মায়ের প্রতি আমি যেটা করেছি, সেটাই হওয়া উচিত, এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। মা-বাবা সন্তানের জন্য একটি রহমত। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিম মোল্লা বেঁচে নেই। মা আমাদের আগলে রেখেছেন। তাঁকে নিয়েই আমাদের তিন ভাইয়ের জীবন। মায়ের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।’
সংবর্ধনা দেওয়ায় তিনি উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, ‘একজন মায়ের প্রতি যে তাঁর ভালবাসা সেটা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে। মা ও ছেলেকে সংবর্ধনা দিয়ে আমরা গর্বিত মনে করছি। মায়ের প্রতি ভালোবাসায় শরিক হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমি নিজেও দুই সন্তানের মা, সবকিছু ছাড়িয়ে আমি একজন মা এটা ভাবতেই গর্ববোধ করি। তাই বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের সম্মান যেন এভাবে থাকে।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘টিটু ও তাঁর পরিবারকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। ওর বাবা আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ছেলেদের বাবা-মায়ের প্রতি কর্তব্যবোধ রয়েছে। আমি ওদের নিয়ে গর্ব করি।’