নাটকে ইমোশনাল প্লট এখন নিরাপদ নয়, বরং চ্যালেঞ্জিং : হিমি
সোমবার। রাতে ঘড়িতে ১২টার কাঁটা ছুঁয়েছে কিছু সময় হলো। মুঠোফোনে পাওয়া গেল এবারের ঈদ নাটকে আলোচনায় থাকা নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমিকে। অবশ্য নির্মাতা তখনও ব্যস্ত মিটিং-শুট নিয়ে। সেই ব্যস্ততার মাঝেই আলাপ শুরু করলেন ঈদে ছয় নাটক মুক্তি পাওয়া এই নির্মাতা। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবারের ঈদ নাটকসহ বিবিধ প্রসঙ্গে।
এনটিভি অনলাইন : ‘২১ বছর আগে’ ঈদ কেমন কেটেছিল, মনে আছে আপনার?
মাহমুদুর রহমান হিমি : ২১ বছর আগের ঈদটি হয়তো বা সবচেয়ে সুন্দর ঈদগুলোর মধ্যে একটি ছিল আমার জীবনে, এতটুকু মনে আছে। তখন বড় ভাই ঢাকা থেকে আসত, আব্বা তখন বেঁচে ছিলেন। ঈদের নামাজের পর দাদিবাড়ি ঘুরতে যাওয়া...; এত স্পেসিফিক ভাবে মনে নেই।
এনটিভি অনলাইন : সেটাই স্বাভাবিক, তা এবারের ঈদ কেমন কাটল?
মাহমুদুর রহমান হিমি : আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই। ঈদে আমার অলমোস্ট ছয়টি নাটক প্রচার হয়েছে। প্রায় সবগুলো নিয়ে দর্শক কথা বলছেন, প্রশংসা করছেন। ভালো লাগছে।
এনটিভি অনলাইন : এনটিভিতে প্রচারিত আপনার ‘২১ বছর পরে’ নাটক তো দর্শককে কাঁদাচ্ছে। ফেসবুকে সে সব নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। আপনার নিজের কাছে দর্শক নাটকটি নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন?
মাহমুদুর রহমান হিমি : এই ঈদে ‘২১ বছর পরে’ নাটকটি আমার অ্যাচিভমেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। আল্লাহর রহমতে দর্শকের কাছ থেকে যা সাড়া পেয়েছি বা এখনও পাচ্ছি; কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া। যাঁদের কাছ থেকে আমি ফিডব্যাক পেয়েছি, সেগুলো চিন্তার বাইরে ছিল। আমাদের মিডিয়াতে অনেক মানুষ ব্রোকেন ফ্যামিলির, এই মানুষগুলো আমার আশপাশে থাকেন এবং আমার গল্পটি তাঁদের সাথে এভাবে কানেক্ট করবে, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেকে আমাকে ফোন করে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ভালোলাগা ও ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন। নাটকটি যে তাঁদের আবেগী করতে পেরেছে; সেটা নির্মাতা হিসেবে কিছু করতে পেরেছি, তার প্রমাণ বলা যায়।
এনটিভি অনলাইন : ‘২১ বছর পরে’ নাটকটির গল্প কীভাবে মাথায় এলো?
মাহমুদুর রহমান হিমি : যখন নাটকটি বানাই, তখন আমি দোটানায় ছিলাম; এ ধরনের নাটক কেউ আদৌ এখন দেখবে কি না, সেটা নিয়ে। দর্শকের পছন্দের জায়গা বা আগ্রহ এখন রম-কম। সে কারণে এমন স্যাড, সিরিয়াস, ইমোশনাল গল্প দেখবে কি না, তা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আউট অফ দ্য বক্স কিছু তৈরি করব। আমি আসলে দর্শকদের জন্যই কাজ করি, তাঁদের অ্যাট্রাকশন নিয়ে ভাবি। আমি এ পর্যন্ত যে ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করেছি, সেগুলোর মধ্যে এত বছরে প্রথম আমি মাকে নিয়ে কোনও নাটক বানিয়েছি।
প্রথমে চিন্তা এসেছে মাকে নিয়ে আমরা যে ধরনের সম্পর্কের গল্পগুলো দেখি বা শুনি; সেগুলো থেকে একটু ভিন্নধর্মী গল্প বলার। গল্প খুঁজতে খুঁজতে এই গল্পের সাথে দেখা।
এনটিভি অনলাইন : আমাদের দর্শক আবেগী কনটেন্ট সহজে গ্রহণ করেন। সে কারণেই কি নিরাপদ ভেবে আবেগী গল্পে বেশি কাজ হচ্ছে এখন?
মাহমুদুর রহমান হিমি : হ্যাঁ, এক সময় আমাদের দর্শক আবেগী কনটেন্ট সহজে গ্রহণ করত। কিন্তু এখন সেই সময় নেই। এখন যদি আপনি ভিউয়ের বিচারে কনটেন্ট হিসাব করেন কিংবা আলোচনা-সমালোচনার দিক দিয়ে বিচার করেন; দর্শক এখন ইমোশনাল নাটকগুলো খুব একটা পছন্দ করেন না। কারণ হিসেবে বলা যায়, এই করোনা-পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একটু আবেগী হয়ে আছি। এমন প্লট মোটেও এখন নিরাপদ নয়, বরং একটি চ্যালেঞ্জিং প্লট।
এনটিভি অনলাইন : আপনার অন্য কাজগুলোতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মাহমুদুর রহমান হিমি : ‘আলো’, ‘কাবিননামা’, ‘ভালোবাসার বটিকাবাব’, ‘ত্রিকোণমিতি’, ‘ওভার এক্সপেক্টেশন’... ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। ফেসবুকে আলোচনা হচ্ছে, দর্শক প্রশংসা করছেন।
এনটিভি অনলাইন : নাটকে সিন্ডিকেটের গল্প শোনা যায়...
মাহমুদুর রহমান হিমি : আমি সব ধরনের আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করি। আপনি আমার কাজগুলো দেখলেই বুঝবেন যে আমার সব আর্টিস্টের সাথেই কাজ করার কমবেশি অভিজ্ঞতা আছে। আমি এনটিভিতে একটি ধারাবাহিক করছি ‘হাউস নং ৯৬’; সেখানে অনেক নতুন নতুন আর্টিস্ট কাজ করছেন।
এনটিভি অনলাইন : এনটিভিতে আপনার ‘হাউস নং ৯৬’ ধারাবাহিকে প্রতি সপ্তাহে অতিথি চরিত্রে জনপ্রিয় তারকারা যুক্ত হন। এ ধরনের কনসেপ্ট দেশে নতুন, এই আইডিয়া কীভাবে এলো?
মাহমুদুর রহমান হিমি : এখনকার সময়ের গতানুগতিক ধারার বাইরে এবং দর্শকের ধারাবাহিক নাটক না দেখার কারণ ব্রেক করার চেষ্টা থেকেই এই ভাবনার জন্ম। আলহামদুলিল্লাহ, নাটকটি বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে।
এনটিভি অনলাইন : নাটক নিয়ে অনেক নির্মাতা বাজেট-স্বল্পতার কথা বলেন, সেই স্বল্পতা আবার জনপ্রিয় নির্মাতাদের নেই; নাটকের বাজেট নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
মাহমুদুর রহমান হিমি : নাটক না, দুনিয়াতে সবকিছুর বাজেট নিয়েই স্বল্পতা। আসলে এই অর্থনৈতিক জায়গায় আমরা কেউ কখনওই কাউকে স্যাটিসফাই করতে পারি না। কিন্তু তার পরেও আলহামদুলিল্লাহ, নাটকের বাজেট আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। আমি ভালো বাজেট পেয়েই কাজ করছি। আমরা আস্তে আস্তে স্বল্পতা থেকে উঠে আসছি।
এনটিভি অনলাইন : নাটক তো অনেক হলো; সবাই ওয়েবে ঝুঁকছে, আপনিও নাকি কথাবার্তা বলছেন, আপডেট কত দূর?
মাহমুদুর রহমান হিমি : সময় হলে জানতে পারবেন। ইনশা আল্লাহ, চেষ্টা করছি নতুন কিছু উপহার দিতে; এটুকুই বলতে পারি।