জাবির হলের কক্ষ ভাঙচুর, দোষীদের শাস্তি দাবি
ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হলের দুটি রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। আবাসিক হলটির জব্বার ব্লকের ২৩৭ ও ২৩৮ নম্বর রুম ভাঙচুরের বিষয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করে প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের আহসান আমিন ফাহিম এবং মো. সোহেল রানা ৪৭ ব্যাচের চার জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১ ডিসেম্বর হল মাঠে চলমান টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর রাত ২টায় শহীদ রফিক জব্বার হলের ৪৭তম ব্যাচের কতিপয় শিক্ষার্থী আয়োজক ৪৬ ব্যাচের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এ ঘটনার জের ধরে আনুমানিক রাত ৩টায় ৪৭তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের মোস্তফা ফয়সাল রাফি, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের হাসান আল মাসুদ, বাংলা বিভাগের অলক কুমার পাল এবং ইতিহাস বিভাগের আকাশ তালুকদার ২৩৭ ও ২৩৮ নম্বর কক্ষে বেপরোয়াভাবে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনার চাক্ষুস প্রমাণ শহীদ রফিক-জব্বার হল ৪৫তম ব্যাচ ও হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার পরে ওই রাতেই হলের প্রভোস্ট এবং একজন সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রুম ভাঙচুরের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি সাধনের বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘শহীদ রফিক-জব্বার হলের রুম ভাঙচুরের ঘটনার একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। তবে, এটা হলের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। হল প্রভোস্ট এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রয়োজন হলে আমরা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করব।’
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত এবং দর্শকের স্লেজিং করাকে কেন্দ্র করে খেলোয়াড়দের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এর জেরে দুটি রুমের জানালা এবং হল মসজিদের সামনের ফুলের টব ভাঙচুর করেন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন এবং একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন।
খেলার আয়োজক কমিটির সদস্য ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কেফায়েত বলেন, ‘৪৫তম ব্যাচের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ৪৭তম ব্যাচ হেরে যায়। ম্যাচ শেষে ৪৭তম ব্যাচ বিপক্ষ দলের আচরণ ও আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাঠ ছাড়ে। আয়োজক কমিটি মাঠে আসতে বললেও পরপর দুটি ম্যাচে তারা মাঠে আসেনি। পরে সমঝোতার জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে আমরা বসি। কিন্তু, ৪৭তম ব্যাচ সিদ্ধান্ত না মেনে উগ্রভাবে রুম থেকে বের হয়ে আসে। পরবর্তীকালে তারা মসজিদের সামনে ফুলের টব এবং ২৩৭ ও ২৩৮ নম্বর রুমের কাচ ভাঙচুর করে।’
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি হলে গিয়েছিলাম। খেলাকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটছে। তবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে হল আইনে শাস্তি প্রদান করা হবে।’
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ওই ঘটনার পর থেকেই হলের বাইরে আছে। তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি।
গত শনিবার শহীদ রফিক-জব্বার হলের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে ২১টি দলের অংশগ্রহণে শুরু হয় সাত দিনব্যাপী ‘ইয়াকুব-মিশু স্মৃতি শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২১’। ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার খেলার ফাইনাল ম্যাচ হওয়ার কথা রয়েছে।