দর্শকদের জন্য এনটিভিতে কাজ করি
যে দিন এনটিভির যাত্রা, সে দিন থেকেই আমি এনটিভির সঙ্গে যুক্ত আছি। প্রথমে ছিলাম জেলা প্রতিনিধি, পরে স্টাফ করেসপনডেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছি। এনটিভি সব সময় তার দক্ষ ও যোগ্য কর্মীকে পুরস্কৃত করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ময়মনসিংহ থেকে লাইভ সম্প্রচার করার জন্য আধুনিক ক্যামেরা লাইভ ডিভাইসসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে দ্রুততম সময়ে ময়মনসিংহের নিউজ কভার করার সুযোগ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এর আগে যখন মিনি ক্যাসেট পদ্ধতিতে ভিজ্যুয়াল পাঠাতাম, তখনও ময়মনসিংহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর এনটিভির স্ক্রিনে উঠে আসত দর্শক চাহিদা নিয়ে। অন্যতম বিশ্ব-কাঁপানো নিউজ ছিল ২০০৬ সালের ৬ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় জেএমবির বাংলা ভাই গ্রেপ্তারে র্যাব-পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের ভিডিও সংবাদ কভার করার মতো দুঃসাহসিক ও অনেক কৃতিত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ক্যামেরায় ধারণচিত্রের ক্যাসেট নিয়ে বাইকযোগে ময়মনসিংহ শহরে ফেরার পথে এনটিভির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে জড়িত অনেকেই আমার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার ফোন করেছেন। বাংলা ভাই গ্রেপ্তারের সেই ঐতিহাসিক ভিডিওচিত্র সবার আগে সে দিন এনটিভির স্ক্রিনেই দেখেছে দেশ ও সারা বিশ্ববাসী। বার্তাকক্ষ সে দিন আমাকে ক্রেডিট দিতে ভোলেনি। প্রতিটি সংবাদ বুলেটিনেই আমার নাম সাদরে উচ্চারণ হয়েছে। এটা ঐতিহাসিকভাবে আমার জন্য অনেক গৌরবের, আনন্দের।
এ ছাড়া পরবর্তীতে ভালুকায় র্যাব-পুলিশের অভিযানে জেএমবির জঙ্গি গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা আমি কভার করতে পেরেছি সবার আগে।
এই সংবাদটি কভার করতে গিয়ে আমি বাঁশের সাঁকো ভেঙে গভীর পাহাড়ি খাদে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলাম। সে সময় নষ্ট হয়েছিল আমার ক্যামেরা ও দুটি মোবাইল ফোন। কর্তৃপক্ষ আমাকে ভালোবেসে একটি ক্যামেরা কেনার টাকাও দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিলে ফুলবাড়িয়ার একটি কোচ দম্পতির খবর এনটিভিতে প্রচারের পর দেশ-বিদেশে হৈচৈ পড়ে যায়। এনটিভিতে সে খবর প্রচার হয় সবার আগে। সে খবরের সূত্র ধরে সে সময় বিবিসি থেকে আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। এ রকম অনেক ঘটনাই দেশ এবং বিশ্ববাসী জেনেছে এনটিভির পর্দায়। এ রকম অনেক খবরের প্রথম শিরোনাম করেছে এনটিভি।
অনেকেই অনেক কথা বলেন, তবে এনটিভির ভেতরের খবর কেউ জানেন না। এনটিভিতে যখন চাকরিপ্রত্যাশী হয়ে প্রতিষ্ঠানটির অফিসে যাই, তখন বার্তাকক্ষের প্রধান বা বার্তাপ্রধান প্রথমেই আমাকে বলেছিলেন, দলবাজি করা যাবে না; সততা বজায় রেখে পেশাদারত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। মানতে পারলে কাজ শুরু করেন, পারফরম্যান্স দেখব। কথামতো কাজ শুরু করলাম, অনেক চড়াই-উৎরাই সামাল দিয়ে আজও আছি। ১৯ বছর পেরিয়ে কুড়ির তারুণ্যে পা রাখছে প্রিয় এনটিভি।
আসলে আমরা এনটিভিতে কাজ করি দর্শকদের জন্য, তাই পারফর্ম করেই যাচ্ছি। দর্শক চায় বলেই আমরা এনটিভিতে আছি। কারণ, এনটিভি দর্শকদের চ্যানেল। আমরা এনটিভির নগণ্য কর্মী মাত্র।
দেশ-বিদেশে এনটিভির দর্শকপ্রিয়তা বোঝা যায় মোবাইলে পাওয়া খুদে বার্তা থেকে। অনেকেই মাঝেমধ্যে ফোন বা মেসেজ করে বলেন, অনেক দিন আপনার নিউজ দেখি না। ঝিমিয়ে পড়লেন না কি।
আগুনে পুড়েছে, নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে এনটিভি পা রাখছে ২০ বছরে। আমিও এনটিভিতেই আছি। কাউকে ফেভার বা ডিসফেভার করে নিন্দনীয় অপ্রিয় সংবাদ প্রচারের কালচার এনটিভিতে নেই। কারণ, এনটিভিতে বসে কোনও কর্মী দলবাজি করলে তার চাকরি থাকে না।
২০১৫ সালে এনটিভি অনলাইন প্রকাশনায় আসার পর আমাদের কাজের পরিধি বেড়েছে, পাশাপাশি আমাদের যোগ্যতা দক্ষতা পেশাদারত্ব প্রমাণের কঠিন কাজটিও আমরা সাফল্যের সাথে উতরে গেছি। দর্শকপ্রিয়তায় দেশ-বিদেশে এনটিভির মতো এনটিভি অনলাইন এখন এক অনন্য ঈর্ষণীয় উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। আমিও এর গর্বিত অংশীদার। এনটিভি অনলাইনে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে, করছি। আমার অনেক নিউজ লাখো পাঠকের কাছে পৌঁছেছে এনটিভি অনলাইনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে। মাঝে মাঝে এনটিভি অনলাইনের সম্পাদক ফকরউদ্দীন জুয়েল রসিকতা করে বলেন, আমি নাকি ২৫ ঘণ্টা এনটিভি অনলাইন নিয়ে পড়ে থাকি। আসলে এনটিভি ও এনটিভি অনলাইনের বাইরে আমাকে জীবিকার তাগিদে অন্য কোনও লাভজনক কাজের জন্য পেরেশান বা অস্থির থাকতে হয় না। তাই এনটিভি আমার ধ্যান-জ্ঞান আর পেশা চর্চার একমাত্র মাধ্যম, পবিত্র কর্মস্থল।
এনটিভি কর্তৃপক্ষ তার সংবাদকর্মীদের দক্ষতা সততা পেশাদারত্বের পাশাপাশি সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে মানুষের প্রতি মানবিক ও দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য গুরুত্বারোপ ও জোরালো তাগিদ দিয়ে থাকে।
আমাদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী স্যার সব সময় বলেন, এনটিভি দেশের টিভি, জনগণের টিভি। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং দেশের মানুষের স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী কোনও সংবাদ প্রকাশের মাধ্যম নয় এনটিভি।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এনটিভির কর্মী ব্যবস্থাপনায় পদবিন্যাস থাকলেও সংবাদকর্মীদের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এনটিভি কর্তৃপক্ষ। এনটিভিতে মফস্বল সংবাদ বা মফস্বল সংবাদকর্মী বলে কোনও বৈষম্যমুলক বিভাজন নেই, সবাই এনটিভির কর্মী, সবাই সমান।
ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ কখনওই সংবাদ নিয়ে অহেতুক নাক গলান না। স্বাধীন সাংবাদিকতা বলতে যা বোঝায়, তা এনটিভির টিম বার্তাকক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ের একজন সংবাদকর্মীও সমানভাবে ভোগ করি আমরা।
এনটিভির কর্মীদের জন্য বেতন-ভাতার পাশাপাশি রয়েছে হ্যান্ডসাম হেলথ ইনস্যুরেন্স স্কিম। এর বাইরেও কেউ অসুস্থ হলে প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যে কোনও দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দ্বিধা করেন না। শুরু থেকেই বেতন-ভাতাদি নিয়মিতকরণে কর্তৃপক্ষ ছিল সজাগ। করোনাকালেও কাজ করার পর এনটিভির কোনও কর্মীকে মাস শেষে আর্থিক অনটনে পড়তে হবে, এমন দুশ্চিন্তার সুযোগ রাখেনি পরিচালনা পর্ষদ। করোনায় আক্রান্ত কর্মীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আমার কাছে এনটিভি হচ্ছে দেশের সেরা কর্মীবান্ধব ও হালাল রুটিরুজির নিরাপদ এবং সাংবাদিকবান্ধব পবিত্র কর্মস্থল। বর্ষপুর্তিতে বহু বার আমাদের জাঁকজমকপূর্ণ আনন্দঘন ফ্যামিলি ডে বা ফ্যামিলি পিকনিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগির অনন্য নজির স্থাপন করেছে এনটিভি।
এনটিভিতে দেনদরবার করে কোনও কাজ হাসিল করা যায় না। সংবাদের স্বার্থে যখন যা প্রয়োজন, সেটা না চাইতেই ব্যবস্থাপনা পর্ষদ আমাদের উপহার দিয়ে থাকেন। আমি এনটিভির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কর্মিবান্ধব এই মহানুভবতা অবনত চিত্তে স্মরণ করছি।
এনটিভির সব ভালোর পেছনে যিনি নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, তিনি হচ্ছেন আমাদের পরম প্রিয় অভিভাবক এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী স্যার। তিনি যেখানে যে ভাবেই থাকেন, সব সময় এনটিভির বিশাল কর্মিবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য ও তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর রাখেন। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন।
লেখক : স্টাফ করেসপনডেন্ট, এনটিভি