সময়ের সাথে আগামীর পথে দুই দশক
দুই দফা আগুনে পুড়ে খাঁটি স্বর্ণে পরিণত হওয়া একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছি দুই দশক। সবুজ ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা রঙের তিনটি ইংরেজি অক্ষর—এনটিভি; চিত্তাকর্ষক লোগোটি আজ আমার চোখের মণিতে পরিণত হয়েছে। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানে টানা দীর্ঘদিন ধরে কাজের সুযোগ পেয়ে প্রতি মুহূর্তেই নিজেকে গর্বিত মনে করেছি।
মনে পড়ে, এনটিভির যাত্রা শুরুর কিছুদিন পর প্রথম যে প্রতিনিধি সম্মেলন হয়, সেখানে এনটিভির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী মহোদয় আমাদের বলেছিলেন—প্রত্যেক জেলায় তোমরা এনটিভির এক-একজন অ্যাম্বাসেডর। তোমাদের ভাবমূর্তির ওপর তোমাদের জেলায় এনটিভির ভাবমূর্তি নির্ভর করবে। সেই থেকে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি তা যশোরের মানুষই ভালো বলতে পারবেন।
এনটিভির সাথে দুই দশকের পথচলায় টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি মনে দাগ কেটে আছে। এক দিন যশোর প্রেসক্লাবে বসে সহকর্মীদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল দেখছি, এনটিভি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে। এক পর্যায়ে যশোর শহরের দড়াটানা এলাকার ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী গফুর ভাই ফোন দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে জানতে চাইলেন, ভাই আপনি কোথায়? আপনার অফিসে আগুন ধরে গেছে। তাঁকে আশ্বস্ত করি, আমি সব সময় যশোরেই থাকি, যশোরেই আছি, কিন্তু অফিস পুড়ে শেষ। দোয়া করেন। গফুর ভাই এনটিভির ভক্ত, নিয়মিত দর্শক। তাঁর কাছ থেকে মাঝেমধ্যে ফল কিনি, এতটুকুই। খুব একটা দেখা-সাক্ষাৎও হয় না। তাঁর এই উদ্বেগে আমার চোখে পানি চলে আসে!
গফুর ভাইয়ের মতো এ রকম অসংখ্য মানুষের দোয়া এবং এনটিভির চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী মহোদয়ের দৃঢ় মনোবলের কারণে আবারও ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্জন্ম নিয়ে যাত্রা শুরু করে এনটিভি। সময়ের সাথে সেই যাত্রা আজও চলেছে আগামীর পথে।
প্রতি বছরই যশোর প্রেসক্লাবে এনটিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। সেখানে এনটিভির প্রতি মানুষের ভালোবাসার আঁচ পাই। যখন কেউ বলেন, সারা দিন সব টিভির খবর দেখি, কিন্তু রাতে শোয়ার আগে এনটিভির শেষ খবরটা না দেখলে মনে কোথায় যেন অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। কিংবা কেবল অপারেটরদের কোনও ত্রুটির কারণে চৌগাছা, শার্শার মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে যখন কেউ ফোন করে বলে, ভাই এনটিভি দেখা যাচ্ছে না, আপনার অফিসকে একটু বলেন; বুঝি এনটিভির প্রতি মানুষের আস্থা কতটা প্রবল।
এনটিভি সম্প্রচারে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত অনেক টিভিই এসেছে, যেগুলোর বেশির ভাগই নিউজ চ্যানেল। অনেক প্রস্তাব, প্রলোভন ছিল। অনেকেই এনটিভি ছেড়ে গেছেন। কিন্তু এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনওই চিন্তা করতে পারিনি।
এনটিভির সাথেই আমার টেলিভিশন-সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু। এখনও চলছি এনটিভির সাথে। শুরুর সেই সময়ে ফাহিম ভাইয়ের (ফাহিম আহমেদ) কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে। অ আ ক খ-এর মতো করে ব্রডকাস্ট জার্নালিজম শিখিয়েছেন। ফাহিম ভাই এখন অন্য একটি নিউজ চ্যানেলের শীর্ষ পদে আছেন। নিউজ এডিটর শহীদ ভাই কারণে-অকারণে ফোন দিয়ে খোঁজ নিতেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে তিনি আমার নেতা ছিলেন। সেই শহীদ ভাইয়ের অকালমৃত্যু হলো। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন। এখনকার প্রায় সব চ্যানেলেই এনটিভির কর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। খুব মিস করি তাঁদের। জহির ভাই, কাঞ্চন ভাই, আনিস ভাইসহ সবাই আমাদের একটি পরিবারের মতো করে আগলে রেখেছেন। ন্যাশনাল ডেস্কের মনিরা আপা কোমল-কঠোর শাসনে যেভাবে কাজ আদায় করেন, তাঁর তুলনা কেবল তিনিই।
এ রকম একটি পরিবারের সদস্য হতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। ২০ বছরে পা রাখা এনটিভির জন্য এই মুহূর্তে আমার প্রাণের উচ্চারণ—যুগ যুগ জিয়ো এনটিভি।
লেখক : স্টাফ করেসপনডেন্ট, যশোর