কুয়েতে সোনার হরিণ খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশিরা বিপদে
কুয়েতে সোনার হরিণ খুঁজতে এসে উল্টো ধরা খাচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। দেশটিতে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৬০ কুয়েতি দিনার, বাংলাদেশি টাকায় ১৬ হাজার টাকা। অথচ কুয়েতে আসতে খরচ হচ্ছে সাত থেকে আট লাখ টাকা। কোনো শ্রমিক যদি খাওয়া-দাওয়া, বাসস্থানসহ অন্যান্য কোনো খরচ নাও করেন তবু কুয়েত আসার খরচের টাকা ওঠাতে তাঁর লাগবে অন্তত চার বছর।
এত টাকা খরচ করেও শ্রমিকদের কাজের নিশ্চয়তা নেই, বসবাসের ব্যবস্থা নেই, নেই খাওয়ার নিশ্চয়তা। কুয়েতে প্রবাসী একাধিক বাংলাদেশি এসব অভিযোগ করেছেন। একই রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন বলেও অভিযোগ আছে তাঁদের।
দীর্ঘ ১০ বছর কুয়েতে শ্রমিক নেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। গত কয়েক বছর থেকে বিশেষ অনুমতিতে আবার কুয়েতে শ্রমিক আসা শুরু হয়েছে। বিশেষ অনুমতি, যাকে আরবিতে লামানা বলা হয়, একে কেন্দ্র করে ভিসার মূল্য এখন আকাশচুম্বী করে তুলেছেন কিছু অসাধু ভিসার দালালচক্র। তারা ডাবল ডিউটি, পার্টটাইমের সুবর্ণ সুযোগসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের কুয়েত এনে বিপদে ফেলছেন।
একাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক অভিযোগ করেন, ভারত আর নেপালের লোকজন বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ টাকা খরচ করে কুয়েত আসছে। অথচ এখানে বাংলাদেশিদের খরচ করতে হয় সাত থেকে আট লাখ টাকা। সেই তুলনায় বেতন খুবই কম, মাত্র ১৬ হাজার টাকা। থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা নেই। অনেক সময় কাজ দেওয়া হয় না। এমনকি কাজের অনুমতি (আকামা) নেই। অনেক শ্রমিকের কাজ ও আবাসন সুবিধা থাকলেও প্রতিবছর আবাসন নবায়নের অজুহাতে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ দিনার কেটে রাখে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েতের আল শাহ আল গারবিয়া ক্লিনিং কোম্পানির প্রায় ২০০ বাংলাদেশি শ্রমিক বাংলাদেশ দূতাবাসে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন। ওই দিন শ্রমিকরা কর্মবিরতি দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন।
ওই শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের গুডলাক ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি ও জামান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের সহযোগিতায় তাঁরা কুয়েতে আসেন। ১০০ কুয়েতি দিনার বেতন ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ দেওয়ার কথা শুনে ভিসা কিনে কুয়েত আসেন। তাঁদের অভিযোগ, কুয়েত এসে কথা ও কাজে কোনো মিল খুঁজে পাননি। সঠিক সময়ে বেতন পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠান। অনেকের আকামা নবায়ন করছে না। এই প্রবাসীদের অনেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা দিয়ে আকামা নবায়ন করছেন।
কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আবদুল লতিফ খান এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঘটনার দিন শ্রমিকদের অভিযোগ শুনে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মালিকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এ সমস্যার সমাধান হয়েছে।
শ্রমিকদের সমস্যার কথা জানতে চাইলে শ্রম কাউন্সিলর বলেন, ‘কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের ঝগড়া হয়। ওই সময় দুই শ্রমিককে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের দাবি কোনো শ্রমিক যদি বেতন না পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁদের কাছে লিখিত তালিকা দেওয়ার জন্য। তাহলে তিনি তা তখনই পরিশোধ করবেন।’
আকামা প্রশ্নে আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘দুই শতাধিক শ্রমিকের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের আকামা নেই। এই বিষয়ে কোম্পানির মালিক আশ্বস্ত করেছেন শিগগিরই তাঁদের আকামা দেবেন।’ তিনি জানান, অনেক কোম্পানিতে নতুন অনেক শ্রমিক আসছেন যা দূতাবাস জানে না। এ কারণে দূতাবাসের কোনো চুক্তিপত্র না থাকায় কোম্পানির বেতন না পাওয়া, আকামা না লাগা, ভালো বাসস্থান না দেওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সমাধান তাঁরা সহজে করতে পারেন না। দূতাবাসের মাধ্যমে কোনো শ্রমিক কুয়েতে আনলে সর্বনিম্ন বেতন, চিকিৎসা ও থাকার সুব্যবস্থা, আকামা, কাজ ও ছুটিসহ শ্রমিকের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করেই অনুমতি দেন। এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে দূতাবাস।
শ্রম কাউন্সিলর বলেন, কিছু অসাধু ভিসা ব্যবসায়ী সে সব নিয়ম না মেনে উচ্চ মূল্যে ভিসা বিক্রি করে দেশ থেকে লোক নিয়ে আসে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এর সমাধানের চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান।