ইউনিভার্সিটি উতারা মালয়েশিয়ায় পড়তে চাইলে
ইউনিভার্সিটি উতারা মালয়েশিয়া, উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার অন্যতম সেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি শুধু মালয়েশিয়াতেই নয়, উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের প্রায় ৬০টিরও অধিক দেশের ছাত্রছাত্রীরা এখানে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে অধ্যয়ন করলেও প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকার অভাবে অনেক বাংলাদেশি চাইলেও আসতে পারেন না এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে জানতে পারবেন।
ক্যাম্পাস পরিচিতি
রাজধানী কুয়ালালামপুর শহর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে এর মূল ক্যাম্পাস। সবুজে ঘেরা ২৬০০ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত বিশাল এই ক্যাম্পাসে একবার প্রবেশ করলে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। সবুজ ক্যাম্পাসের জন্য এই ইউনিভার্সিটির খ্যাতি রয়েছে বেশ। গলফ ক্লাব থেকে গো কার্ট, নদী কিংবা লেক, পাহাড় কিংবা ঝরনা সবই কিছুই আছে এই ক্যাম্পাসে। অনেক হলো ক্যাম্পাসের আলোচনা। এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে।
আবেদনের সময়
ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আছে দুটি সেশন। ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর। এখানে ভর্তি হতে চাইলে প্রথমে আপনাকে যেকোনো একটি সেশন বাছাই করতে হবে। তবে মনে রাখবেন আপনি যদি ফেব্রুয়ারি সেশনে আসতে চান, তবে আপনাকে অক্টোবরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আর সেপ্টেম্বরে আসতে চাইলে মে মাসের ভিতর আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য আপনাকে যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে পূরণ করে নিন। এরপর আপনাকে দিতে হবে আবেদন ফি। আবেদন ফি লাগবে ৩০০০ টাকা, যা আপনি যেকোনো আন্তর্জাতিক কার্ডের ম্যাধমে পরিশোধ করতে পারবেন। এরপর আপনার লেনদের রশিদটি আবেদন পত্রের সঙ্গে পাঠিয়ে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায়। এ ক্ষেত্রে আপনি ডিএইচএলের সাহায্য নিতে পারেন।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় আপনার নীল ব্যাকগ্রাউন্ডের ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্টের কপি, একাডেমিক সার্টিফিকেট, আইএলটিএস বা টোফেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এ ছাড়া এসময় আপনাকে অবশ্যই দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার ও আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে কমপক্ষে চার লঅখ টাকার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে। এরপর আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে আপনাকে মেইল করে জানিয়ে দেওয়া হবে। অথবা আপনি ফোন করেও জেনে নিতে পারবেন।
এরপর আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অফিশিয়াল অফার লেটার দেওয়া হবে। অফার লেটার পাওয়ার পর আপনাকে ইএমজিএসের জন্য আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাত্রীদের কিছুটা জটিলতায় পড়তে দেখা যায়। কেননা এ সময় আপনাকে ইএমজিএস ফি হিসেবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। তবে এ ব্যাপারটাও খুব একটা জটিল না। এ ব্যাপারে আপনি সিটি ব্যাংকের বনানী শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন। এরপর ইএমজিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনাকে আরেকটি লেটার দেওয়া হবে। এ সময় আপনার দায়িত্ব হবে ভার্সিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে লেটারটা হাতে পাওয়া। এরপর লেটার হাতে পেয়ে গেলে আপনাকে যেতে হবে ভিসার জন্য। ভিসার জন্য আপনাকে মালয়েশিয়ান দূতাবাস নির্ধারিত যেকোনো একটি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ভিসার জন্য দূতাবাস সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় নেবে। তবে আপনার যদি ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার তাড়া থাকে, তবে আপনি সরাসরি ভিসা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভিসার ব্যবস্থা করতে পারবেন। তবে সে জন্য আপনাকে নিজে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর আপনার কাঙ্ক্ষিত ভিসা হয়ে গেলে প্লেনের টিকিট কেটে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে উড়াল দিন। এ তো গেল ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা এবার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলি।
যোগ্যতা
ব্যাচেলর লেভেলে এখানকার প্রায় ৩০ বিষয়ের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের পছন্দমতো বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে যেকোনো শিক্ষার্থীকে অবশ্যই কমপক্ষে ১২ বছর পড়াশোনা করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক, আলিম কিংবা এ লেভেল পাস করা যেকোনো শিক্ষার্থী চাইলেই এখানে আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে জিপিএ ৪ পেতে হবে। এ ছাড়া এখানে ভর্তি হতে হলে আপনাকে আইএলটিএসে কমপক্ষে ৫.৫ পেতে হবে। এ ছাড়া আলাদা আলাদা বিষয়ে ভর্তির জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, তা আপনি জানতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক ভর্তি সেন্টার। সেখানে ফোন করে আপনি যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করে আপনার উত্তরটি জেনে নিতে পারেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়েও প্রশ্ন করে উত্তর জানতে পারবেন।
এখানে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এজেন্টের সাহায্য নেওয়া। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা বিদেশে আসতে হলে কোনো দালাল বা এজেন্ট ছাড়া আসা যায় না। এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। আপনি যদি কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান, তবে প্রথমেই আপনাকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
কেননা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনি সব তথ্য খুঁজে পাবেন। এর পরও কোনো প্রশ্ন থাকলে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। দালালদের সঙ্গে কোনো অবস্থায়ই যোগাযোগ করবেন না। এতে আপনার মূল্যবান অর্থ ও সম্পদ দুটোই নষ্ট হবে। মনে রাখবেন, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে দালালদের কখনোই কোনো যোগাযোগ থাকে না। তাই দালালদের হয়রানিমুক্ত হোক আপনার স্বপ্নের উচ্চ শিক্ষার যাত্রা, এই প্রত্যাশায় শেষ করছি।