যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ঈর্ষণীয় সাফল্য
যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অভাবনীয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। সরকারি-বেসরকারিসহ তথ্যপ্রযুক্তির সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টরা অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে কাজ করে আকাশচুম্বী সাফল্য অর্জন করেছেন।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, ডাটাবেজ ডেভেলপমেন্ট এবং ম্যানেজমেন্ট, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, পারফরম্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং, টেস্টিং—সর্বক্ষেত্রেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশিরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত। আয় করছেন পাঁচ থেকে ছয় ফিগারের বেতন।
কাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করছেন এন্টারপ্রাইজ প্রোগ্রাম ল্যাঙ্গুয়েজ জাভা, সিসি প্লাস প্লাস, পাইথন, ডট নেট ফ্রেমওয়ার্ক ইত্যাদি। এ ছাড়া ব্যবহার করছেন গিটহাব, জেনকিনস, লোডরানার, জেমিটার, এইচপি পারফরম্যান্স সেন্টার, ওরাকল, সিক্যুয়েল সার্ভার, নিউরেলিক, পালাংক, কুইকটেস্ট প্রো, রুবি কুকুমবার, সেলেনিয়াম, জিরা, এইচপি এএলএম ইত্যাদি নানা জনপ্রিয় টুলস। ব্যবহার করছেন উইন্ডোজ, ইউনি·/লাইনে·, ক্লাউডসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের কন্ট্রাক্টর তরুণ বাংলাদেশি শেখ রহমান। মাত্র ৩০ বছর বয়সেই অত্যন্ত দক্ষতা আর সফলতার সঙ্গে অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার টিমের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রায় ২০ জন ইঞ্জিনিয়ারের একটি অটোমেশন দলের দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ রহমানের টিমের বেশির ভাগ সদস্যই বাংলাদেশি এবং সবাই অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গেই কাজ করছেন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আমি একজন বাংলাদেশি। আমার যখনই কোনো সুযোগ আসে, আমি তখনই বাংলাদেশিদেরই নিয়োগ প্রদান করে থাকি।’
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ম্যানেজার তরুণ বাংলাদেশি শেখ রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশেই আমি জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু এখানে আসার পর থেকেই ইনফরমেশন টেকনোলজির ওপর আমার আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং পড়াশোনা করি।’ তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আমি একটি বড় এবং শক্তিশালী মেধাসম্পন্ন বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের।’
শেখ রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিভিন্ন প্রজেক্টে শত শত বাংলাদেশি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন বাংলাদেশি কাজ করছেন। আমি যে কোম্পানির হয়ে কাজ করছি, সেই কোম্পানি থেকে প্রায় ৩০ জন বাংলাদেশি কাজ করছেন।’ তিনি বলেন, ‘যখনই আমি নিয়োগ প্রদানের সুযোগ পাই, সবার আগে আমি বাংলাদেশি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং তাঁদের নিয়োগের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।’
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন মোহাম্মদ সাইদ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশিরা অত্যন্ত মেধাবী। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন বিভাগে শত শত বাংলাদেশি অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কাজ করছেন।’
ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসে লিড হিসেবে কাজ করছেন মোহাম্মদ আজাদ। ছয় থেকে সাতজনের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁর টিমে আমেরিকান, রাশিয়ান, অফ্রিকানসহ বিভিন্ন দেশের ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন। আবদুল্লা চৌধুরী কাজ করছেন পারফরম্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। অত্যন্ত দক্ষতা আর সফলতার সঙ্গেই কাজ করেন ১৫ জনের একটি দলে। এই দলে আমেরিকান, রাশিয়ান, চায়নিজ, আফ্রিকান, শ্রীলঙ্কানসহ নানা দেশের পারফরম্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছে। সবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিনি কাজ করছেন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বিভিন্ন প্রজেক্টে।
এ ছাড়া তারিক আলম, মুকুল মোহসীন, তাজবীর আহমেদ, আবু মাহফুজ, আজাদ আহমেদ, কাজী রশীদ, মোহাম্মদ আলমসহ আরো অনেক তরুণ প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ার ও আর্কিটেক্টরা সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে। দেশের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আরো বড় কিছু করার আগ্রহ ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের ইউনাইটেড স্টেটস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ম্যানেজার শেখ রহমান বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করে তাঁদের সেই টেকনোলজির সঙ্গে আপডেট রেখে কাজের উপযুক্ত করে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শিগগির যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে কর্মরতদের একটি ছাতার নিচে নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ করে সভা-সেমিনার প্রযুক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করছি। খুব শিগগির এ ব্যাপারে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই, যার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ নতুন প্রজন্মের তরুণরা প্রবাসে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দিনভর কাজ শেষে বিকেল-সন্ধ্যায় বাড়ির ছাদে পিৎজা, সোডা, পানি, চিপস ইত্যাদি নিয়ে আডডা দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন প্রবাসী বাংলাদেশিরা আবারও ঘরে ফিরে যান পরিবার-পরিজনের কাছে। আপনজনের ছোঁয়ায় আবার শুরু হয় পরের দিন কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি।