সৌদিতে ভোগান্তির শিকার বাংলাদেশি হজযাত্রীরা
দেশে ফ্লাইট বাতিলে বিড়ম্বনার শিকার হয়ে সৌদি আরবে এসেও হজ এজেন্সিগুলোর অব্যবস্থাপনা ও নানা ধরনের দুর্ভোগে শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি হজযাত্রীরা।
নিম্নমানের খাবার, দেরিতে বাড়ি ভাড়া করা, চুক্তিহীন বাড়িতে গাদাগাদি করে হজযাত্রীদের রাখা, দেরিতে মোয়াল্লেম নেওয়া, হজযাত্রীদের খোঁজ-খবর না নেওয়া ও দেরিতে বিমানের টিকিট সংগ্রহ, নিম্নমানের লাগেজ সরবরাহসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ অফিস থেকে হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম যথাসময়ে শেষ করতে বারবার নির্দেশ দেওয়া হলেও এজেন্সি মালিকরা তা মানেননি। নিজেদের ‘ইচ্ছা মতো’ কাজ করায় ভিসা ইস্যু ও হজযাত্রী পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ফেনীর হজযাত্রী নূর নবী বলেন, ‘এজেন্সি আমাদের হারাম শরিফের কাছে রুম দেওয়ার কথা বললেও দিয়েছে দুই কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া এক রুমে তিনজন করে থাকার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও আছি ছয়জন করে। ভালো খাবারের কথা থাকলেও নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫-১৬ সালে যারা হজ পালন করে এসেছেন, তাদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল দিতে বলে সৌদি আরব সরকার। হজ এজেন্সির মালিকরা এই অর্থ দিতে আপত্তি তোলায় তৈরি হয় জটিলতা। এসব এজেন্সির ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হজযাত্রীর নামে ভিসা ইস্যু করা হয়। কিন্তু বাকিদের ভিসা না হওয়া পর্যন্ত সৌদি পাঠায়নি এজেন্সিগুলো। ফলে যাত্রী সংকটে পড়ে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল করে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ১০ জুনের মধ্যে সৌদি আরবে বাড়িভাড়া করার নিদেশ দেয় এজেন্সিগুলোকে। যদিও ১০ থেকে ১২টি এজেন্সি বাড়িভাড়া করে বলে জানা যায়। এ ছাড়া আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশি ৯১টি এজেন্সি মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তি করেনি। ফলে এসব এজেন্সির ১৮ হাজার ৪০০ হজযাত্রীর বাড়িভাড়া না হওয়ায় ভিসা ইস্যু হতে দেরি ও ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজযাত্রীরা যাওয়ার পরও মোয়াল্লেমের সঙ্গে এজেন্সিগুলোর দেরিতে চুক্তি, সময় মতো বাড়িভাড়া না করা, ভিসা ছাড় ও মোফা (হজ ভিসা) পাঠাতে দেরি হওয়া বর্তমান ভোগান্তির কারণ।
বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৬৩৫টি এজেন্সি। তাদের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ।
সৌদি হজ সংক্রান্ত শুরা কমিটির সদস্য ওমর সিরাজ আকবর বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ১৫টি বেসরকারি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশন ও সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ। সতর্ক করা হয়েছে আরো ২০টি বেসরকারি হজ এজেন্সিকে।’
তবে ওই এজেন্সিগুলোর নাম এবং কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি। পবিত্র হজ শেষে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করবে বলে জানিয়েছে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ।