বাংলাদেশি স্টুডেন্টস নাইট
মালয়েশিয়ায় মাতৃভূমির আমেজ
মালয়েশিয়ার উন্নয়নে বাংলাদেশিদের বিশাল একটা অবদান রয়েছে যা একরকম অনস্বীকার্য; সেটা শ্রম দিয়ে হোক আর মেধা দিয়েই হোক। মাহাথির মুহাম্মদ এখনো বাংলাদেশি অনেককে বলেন, আই এম ফ্রম ‘চিত্তাগন’। বলতে তিনি গর্ববোধ করেন। ব্লাডটা তো এখান থেকেই যাওয়া, হতে পারে দুই পুরুষ। আমরা নিজেকে আদম সন্তান বলতে পারলে মাহাথিরও বাংলাদেশের সন্তান বটে! বৈধ অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক বাংলাদেশি তো আছেই। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির একটি দেশ হিসেবে অনেকে শুধু শ্রমিক ভাইদের প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশিদের বিচার করে থাকেন। অনেকে জানেনই না মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কতটা দাপটের সঙ্গে মেধার তলোয়ার চালায়।
মালয়েশিয়ার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষমানের শিক্ষার্থীদের বিরাট একটা অংশ বাংলাদেশি। ছাত্ররা শুধু পড়ালেখাই করেন না, সুযোগ পেলেই নিজেদের জাত চিনিয়ে দেন। পহেলা বৈশাখ আর অন্যান্য উপলক্ষ এলেই দেখা যায় প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশিদের হরেক রকম আয়োজনে রমরমা হয়ে উঠেছে। নিজেদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি প্রদর্শনের আয়োজন। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্ররাই নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান করে থাকে।
অনেকে আজকাল বলিউড কালচারকে বাংলাদেশি সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দিতে চায়। তবে এই ধারণা সঠিক নয়। অনেক কিছুতে মিল থাকলেও যে যার অবস্থানে স্বকীয়, এটা ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনেক প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ।
২০১২ সাল থেকে মালয়েশিয়ার জাতীয় এবং সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব মালায়াতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বাংলাদেশি স্টুডেন্টস নাইট (BSN)। প্রথমবার এতে এসেছিল মালয়েশিয়ার ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা। ইউনিভার্সিটি মালায়া, বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আর প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় এই ইভেন্টের সফলতা ছিল প্রত্যাশার বাইরে (অবশ্যই সূচক ছিল পজিটিভ!)।
পরের বছর প্রোগ্রামটি আরেকটু বড় আকারে হলো। মানুষও আরেকটু ভালো করে চিনল। ২৪ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পারফর্মার আর দর্শকরা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। প্রোগ্রামটি বাংলাদেশি সংস্কৃতির প্রতিনিধিস্থানীয় হলেও পারফর্মারদের মাঝে ভিনদেশিরাও থাকেন। এটি বেশ আকর্ষণীয় এবং কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার। বাংলা গানে চীনা একজন নাচছে। আবার দর্শকদের ভেতরও অনেক বিদেশিকে দেখা যায়। প্রোগ্রাম পছন্দ করেন বলেই এরা প্রতিবছর ফিরে আসে আরো কিছু বন্ধুবান্ধবসহ।
২০১৪ সালে বাংলাদেশি স্টুডেন্টস নাইট (BSN) আরেকটু বড় করে হলো। এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল ইভেন্ট ডিরেক্টর রাশিক আদিত হায়দারের সঙ্গে, তিনি পড়ছেন ইউনিভার্সিটি অব মালায়াতে, অ্যাকাউন্টিংয়ে শেষ বর্ষে। রাজউক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েটের পর আসেন ইউনিভার্সিটি অব মালায়াতে। বিদেশিদের নিজ দেশে সংস্কৃতি দেখাতে আর দেশীয় শিক্ষার্থীদের একটা দেশীয় আমেজে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতে জুনিয়র স্টুডেন্ট হিসেবেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন এ রকম একটি বড় ইভেন্ট পরিচালনার। অনেকের নিরুৎসাহিত থাকার পরও নিজের ইচ্ছায় আর আশপাশের মানুষদের উৎসাহে এ রকম একটি ইভেন্ট সফল করেন। প্রতিবারের একটু সফলতা তাকে পরের বছরের বড় প্রোগ্রামের স্বপ্ন দেখিয়েছিল।
২০১৪ সালে প্রত্যাশা থেকেও বেশি দর্শক এসেছিল এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে- ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, আশপাশের বহু ব্যবসায়ী, পরিবার-পরিজন এবং শ্রমিক ভাইয়েরা। মূলত প্রবাসজীবনের কষ্ট গাথায় কিছু দেশি বিনোদনের সুযোগ করে দিতেই তার এবং তার দলের এই আয়োজন। তিন ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে বাংলা গান-নাচ আর মঞ্চনাটকসহ অনেক দেশীয় সেগমেন্টে দর্শকদের মাতিয়ে রাখতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখা হয় না আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
গত বছরগুলোর মতো এ বছরও ৭ নভেম্বরে ইউনিভার্সিটি মালায়ার দেওয়ান টুংকু চ্যান্সেলরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি স্টুডেন্টর এই সিগনেচার ইভেন্টটি। আশা করা হচ্ছে ইউনিভার্সিটি মালায়ার ভাইস চ্যান্সেলর, বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনেক দেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতরা, মালয়েশিয়া ট্যুরিজম বোর্ডের ডিরেক্টর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ অনুষ্ঠানের প্রাণ মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি ছাত্রদের উপস্থিতিতে এবারও BSN 2015-এর জমজমাট আয়োজন বসবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে এবার আগের চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক দর্শক পারফরমারের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে।