অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি কাউন্সিলর জামান টিটুর গল্প
সিডনির লাকেম্বা শহরের ট্রেনস্টেশন এ নেমে এক তরুণ পানি কিনতে গেলেন বাংলাদেশ প্যালেস নামে এক সুপারস্টোরে। তা প্রায় এক যুগ আগের কথা। তরুণ টগবগে এই যুবকের চোখে তখন নানা স্বপ্ন। অপেরা বার রেস্টুরেন্টে হেড শেফ হিসেবে কাজ করে মোহাম্মাদ জামান টিটু। আর রাতের বেলা লাকেম্বা শহরে বসে থাকেন বাংলাদেশিদের সঙ্গে।
মোহাম্মাদ জামানের মনের ভেতর দুটি স্বপ্ন। এক সবচেয়ে জনপ্রিয় এই বাংলাদেশ প্যালেসের মালিক হওয়ার আর দ্বিতীয় স্বপ্ন অস্ট্রেলিয়ার মূল ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে নিজের কমিউনিটিকে সাহায্য করা। আর এই মোহাম্মদ জামান গত অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে সরকারদলীয় লিবারেল পার্টি থেকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁর এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ব্লাই টার্নবুল তাঁকে একজন তরুণ এবং পরিশ্রমী নেতা হিসেবে গত নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন। কিন্তু বিপুল ভোটে নিজের অবস্থান শক্ত করলেও বিরোধী দলের অত্যন্ত দক্ষ এবং তৎকালীন লেবর পার্টির ডেপুটি লিডার এবং সাবেক ইমিগ্রেশন মিনিস্টার টনি বার্কের কাছে হেরে যান মোহাম্মাদ জামান টিটু।
কিন্তু মানসিকভাবে মোহাম্মাদ জামান টিটু হেরে যাননি। তিনি জানান দিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া হচ্ছে মাল্টিকালচারাল দেশ, এই দেশে সবার জন্য সমান অধিকার। আবার প্রস্তুত নেন যুদ্ধে যাওয়ার, এবার কৌঁসুলি পরিবর্তন করেছেন কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় নির্বাচনে।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনি রাজ্যের ব্যাংকটাউনস এবং কেন্টারবুরি সিটি কাউন্সিল থেকে বিপুল ভোট জয় লাভ করেন মোহাম্মদ জামান। এর ফলে নিজের এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির অবস্থান শক্ত হয় মোহাম্মাদ জামানের। কাউন্সিলর মোহাম্মদ জামান পুরো বাংলাদেশ কমিউনিটিতে টিটু ভাই হিসেবে পরিচিত। অত্যন্ত হাসিমাখা এই সাদা মনের তরুণ মানুষটি কাজ করে যাচ্ছে সিডনির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বিভিন্ন সময় এই মানুষটি অন্য দেশি কমিউনিটির প্রতিহিংসার পরিণীত হন। লাকেম্বা রেলওয়ে পেরেডের সঙ্গে লাগোয়া বাংলাদেশিদের স্বার্থে নিজের জীবন বাজি রেখে বহুবার বাংলাদেশিদের জন্য লেবানিজ বখাটেদের থেকে বাংলাদেশিদের রক্ষা করেছেন।
তাঁর কমিউনিটি কিংবা সামাজিক কাজগুলো লিখে শেষ করা যাবে না, রিফুজিদেরকে ইংলিশ সেন্টার করে দেওয়া, ভলান্টারি জেপি সার্ভিস, সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতি আর্থিক অনুদান এবং সিটি কাউন্সিল অফিস থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটির সংগঠনগুলোর বার্ষিক গ্রান্টসহ দল-মত নির্বিশেষে এই সাদা মনের মানুষটি কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার এই কৃতী সন্তান বর্তমানে সিডনির বেলমোরে-লাকেম্বা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড বিজনেসের সেক্রেটারি। এই ছাড়া তিনি অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী সদস্য।
সিডনি ফুড পিটি লিমিটেড, বাংলাদেশ প্যালেস স্টোরের ডিরেক্টরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তাঁর রাজনৈতিক দল বর্তমান অস্ট্রেলিয়ান সরকারি দল লিবারেল পার্টি কমুনিত্যে অসামান্য অবদান এবং নিজ দলে তার কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে নিউ সাউথ ওয়েলস এর ডেলিগেটে হিসেবে সম্মান দিয়েছেন। এ ছাড়া কমিউনিটি কাজে বিশেষ অবদানের জন্য মিডিয়া পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৩, অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম আপডেট বিডিনিউজ থেকে। অস্ট্রেলিয়ান বাংলা কমিউনিটির মিডিয়া সম্প্রচারে তার অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এনটিভি অস্ট্রেলিয়া থেকে পেয়েছেন বেস্ট কান্ট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড।
মোহাম্মদ জামান টিটু ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের বাবা। সিডনিতে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিপাড়া থেকে খেলার মাঠে এক নামে পরিচিত এই কাউন্সিলর জামান টিটু।
এনটিভি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের সময় মোহাম্মদ জামান টিটু এক যুগ আগের স্বপ্নের কথা স্মরণ করে কিছুটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমি সারা জীবন এই কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চাই। এখন সামনে একটা ইচ্ছা আছে বাংলাদেশিদের জন্য একটা কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করা এবং অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউস লাল-সবুজের বাংলাদেশ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো মসৃণ করা।’