মালয়েশিয়ায় বিএসইউএমের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
গত রোববার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা। দিনটি উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার (বিএসইউএম) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ ঈদ উৎসব ও নৈশভোজ। রাজধানী কুয়ালালামপুরের পুসাত বাহাসা মায়া অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি পিএইচডি গবেষক ফয়জুল হকের তত্ত্বাবধানে, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বোরহান উদ্দিনের আহ্বানে ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক ইমনের পরিচালনায় সম্পন্ন হয় অনুষ্ঠানটি।
মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসংবলিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার অধ্যাপক ড. জিহাদুল করিম।
এ সময় ড. জিহাদুল বলেন, ‘আমি তরুণ শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এমন চমৎকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত। আমি গর্বিত তার কারণ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশি সন্তানরা দেশের বাইরে থেকেও দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রাখতে বলীয়ান। এমন একটি বড় সংগঠনকে সফলভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিএসইউএমের সভাপতি ফয়জুল হককে আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই।’
জিহাদুল আরো বলেন, “এখানে আসা সব তরুণ ছাত্র-ছাত্রীকে বলছি, ‘তোমাদের হাতেই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনে একঝাঁক তরুণের অবদান অনস্বীকার্য। এখন তোমাদের দায়িত্ব, সম্প্রীতি ও একতা বজায় রেখে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের ভাবমূর্তি সব স্থানে বৃদ্ধি করা। আজকের অনুষ্ঠানে তোমাদের একতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দেখে আমার বিশ্বাস, তোমরা এর চেয়েও বেশি দায়িত্বপালন করতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।’”
বিএসইউএমের সভাপতি ফয়জুল হক বলেন, ‘আজকে বিদেশের মাটিতে সব বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী, ভাই-বোনেরা একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পেরে আনন্দিত। আপনাদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, আন্তরিকতা ও সংগঠনের প্রতি অসীম ভালোবাসার বদৌলতে আমরা এত সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনে সফল হয়েছি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সব কমিটির সদস্যদের, যাঁরা এই ঈদের দিনেও দিনব্যাপী পরিশ্রম করেছেন আমাদের সবাইকে একসঙ্গে ঈদের আনন্দ উপহার দেওয়ার জন্য।’
ফয়জুল হক আরো বলেন, ‘বিএসইউএম আজ সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর আস্থা ও ভালোবাসার স্থান। আমরা এরই মধ্যে প্রমাণ করে দিয়েছি, দেশের বাইরে একতাবদ্ধ থাকার শক্তি দিয়ে সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব। আপনাদের সবার ভালোবাসা পেলে আমরা বিএসইউএম সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকব।’
পরে লিমককউইং ইউনিভার্সিটির নাফিউ আনোয়ার, সবুজ আহমেদ ইমন ও শওকতের নেতৃত্বে পরিচালিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ বাংলা গানের পাশাপাশি গান পরিবেশন করেন শারমিন ও ফারিয়া। ওই সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেন উপস্থিত দর্শকরাও। এতে একটি আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রিসার্চ সেক্রেটারি ও ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার (ইউপিএম) পিএইচডি গবেষক শরীফ হোসেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি হেল্প ইউনিভার্সিটির আবদুল্লাহ আল তৌহিদ, সিনিয়র সহসভাপতি ইউনিভার্সিটি মালয়ার শাপলা মেহজাবীন, সহসভাপতি ইউনিভার্সিটি পুত্রার নাজমুন নাহার, লিমককউইং ইউনিভার্সিটির আসিফ আশরাফ খান, মাহিমুর রহমান খান, আকিফ আসহাব খান, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউনিভার্সিটি কুয়ালালামপুরের মোহাম্মদ জাহেদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটির হাসিবুর রহমান, নাসিম আরাফাত, রাফি, আবরার, জীবনসহ আরো অনেকে।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএসইউএম মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার সেমিনার, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ গঠনমূলক ও সৃজনশীল নানা ধরনের অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করে আসছে সংগঠনটি।
পবিত্র রমজানে ইফতার পার্টি, ঈদ পুনর্মিলনী, আনন্দ ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ মাসিক ভিত্তিতে বিএসইউএমের বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। যার উদ্দেশ্য ছিল, পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকা সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিএসইউএম পরিবার থেকে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া।
ওই অনুষ্ঠানে ৩০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সমাজসেবী গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত করা হয়।