বিদেশের মাটিতে একজন নিধি
দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন বাংলাদেশের তরুণরা। দূর পরবাসে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী নিজ প্রতিভায় সমুজ্জ্বল করছেন দেশের নাম। তেমনই একজন চট্টগ্রামের মেয়ে জাইমা জাহিন নিধি। প্রবাসে গিয়েও যিনি ভুলে যাননি নিজস্ব সংস্কৃতি আর কৃষ্টিকে; বরং নিজ দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে কখনো কবিতার ভাষায়, আবার কখনো তুলির আঁচড়ে চিত্রিত করছেন অন্যদের সামনে। ভিনদেশি মানুষের কাছে মেলে ধরছেন নিজের দেশকে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নিধি। সেখানকার ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ অব সেদায়া ইন্টারন্যাশনালে (ইউসিএসআই) ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড বিল্ট এনভায়রনমেন্ট বিভাগে পড়ছেন তিনি।
বিদেশে পড়াশোনা, দেশে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চিন্তা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাওয়া নানা পুরস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় নিধির। দীর্ঘ আলাপচারিতায় নিধি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিজ দেশের তুলনা কখনই হয় না, কিন্তু দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে এসে একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। সেটা হলো, এখানে বিশ্বের অনেক দেশের ছেলেমেয়ের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিশে একদিকে যেমন বিদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছি, অন্যদিকে আমার দেশের সংস্কৃতির সঙ্গেও তাদের পরিচিত করতে পারছি। এতে আমার বিশাল একটা অভিজ্ঞতা যোগ হয়েছে। বাংলাদেশে থাকলে এই অভিজ্ঞতা অর্জন হতো না।’
নিধি বলেন, ‘দেশে থাকতে দেশের ভেতরে অনেক প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছি। আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ইউএসসিআই ইউনিভার্সিটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি নাটকে অভিনয় করার সুযোগ হয়। বিশ্বের পাঁচ থেকে সাতটি দেশের ছেলেমেয়ে এই নাটকে বিভিন্ন পর্যায়ে অভিনয় করে।’
নিধি আরো বলেন, ‘দেশে আমি নরেন আবৃত্তি একাডেমির সঙ্গে ১৪ বছর কাজ করেছি। পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাই।’
জাইমা জাহিন নিধি চঞ্চল হলেও কাজের বিষয়ে যথেষ্ট ধৈর্যশীল। কবিতা-নাটক ছাড়াও ছবি আঁকেন নিধি। আর মায়ের কাছেই ছবি আঁকার হাতেখড়ি।
যেখানে প্রতিযোগিতা, সেখানেই ছুটে যান নিধি। প্রথম পুরস্কার নিয়েই ঘরে ফেরেন তিনি। আর এ পুরস্কারপ্রাপ্তির শুরু ১৯৯৭ সালে, তিনি যখন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। এভাবেই তাঁর পুরস্কারে ঝুলিতে যুক্ত হয় অনেক দেশি-বিদেশি পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্তির এ ধারা অব্যাহত এখনো।
জাতীয় শিশু অধিকার সপ্তাহ, মিনা-কাকন দিবস পুরস্কারসহ শিশু একাডেমি পুরস্কার, শংকর আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক, আন্তর্জাতিক ষষ্ঠ ব্যানিয়াল শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ১৭ দেশের মধ্যে গোল্ড মেডেল অর্জন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অনেক পুরস্কার অর্জন করেন নিধি। এ ছাড়া জাপান, ভারত, ইরান, তুরস্ক, ব্যাংককসহ বিভিন্ন দেশে তাঁর চিত্রকর্ম পুরস্কৃত হয়।
বিদেশে থেকে দেশের সংস্কৃতিকে ভোলেননি নিধি। বিদেশে দেশীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। কৃতী এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিদেশিরা জানুক, আমরা সেই বাঙালি জাতি, যে জাতি শুধু ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি।’
দেশের সাহিত্যচর্চা করতে তাই নিধি কুয়ালালামপুর হুমায়ুন সাহিত্য পরিষদে যোগ দেন। আর সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টারের সদস্য হন।
মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করলেও দেশে গিয়েই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান নিধি। তিনি বলেন, ‘দেশকে অনেক বেশি মনে পড়ে, প্রবাস জীবন যতই মধুর হোক না কেন, নিজ দেশে থাকার শান্তি কোথাও খুঁজে পাওয়া সম্ভব না।’