সিডনিতে বিজয়মেলা, ‘আমরা বাংলাদেশি’ উদযাপিত
‘বয়স ছিল দুই বছর। যুদ্ধ কী তা বুঝবার পারতাম না। বাবা নাকি ভারতে গেছিল মুক্তি বাহিনীতে ট্রেনিং নিতে, ট্রেনিং নিয়ে দেশে আসলেন, যুদ্ধ করলেন, দেশ স্বাধীন হলো। বাবা আর আসলেন না।’
আমি ছিলাম দ্বিতীয় সন্তান। মায়ের বয়স তখনো ২৫-এর ঘরে। কত বড় মাপের আমার মায়ের মন, নিজের স্বামীকে ছেড়ে দিলেন দেশের জন্য। বাবা শহীদ হয়ে আমার মাকে রেখে গেলেন তাঁর সন্তানদের কাছে, এই ইতিহাস তুলে ধরতে। পুরো জীবনটা তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে কাটিয়ে দিলেন।’ এভাবেই মায়ের মুখ থেকে শোনা স্মৃতি নিজের সন্তানকে বলছিলেন ওয়েস্ট সিডনির বাসিন্দা আনজুমান আরা। এমন হাজারো স্মৃতি আছে মুক্তিযুদ্ধের।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে বসেছে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়মেলা ‘আমরা বাংলাদেশি’। সিডনির লেকেম্বো ওলইপার্ক গ্রাইন্ডে এই মেলার আয়োজক আমরা বাংলাদেশি সংগঠন। আর মেলায় ইলেকট্রনিক মিডিয়া পার্টনার ছিল এনটিভি অস্ট্রেলিয়া।
পুরো মেলাজুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে নবীন ও তরুণদের মধ্যে, কারো গায়ে গামছা কারো বা ফতুয়া। কমতি নেই তরুণীদের পোশাকেও। গাঢ় লাল কালারের লিপস্টিক আর সবুজ কামিজে কিংবা লাল শাড়িতে এ আরেক বাংলাদেশ।
ছোটদের নিয়ে ইতিহাস, কবিতা, গান আর বিতর্কে সরব স্টেজ। দেশি খাবার আর আতশবাজিতে বিজয়ের সুরে হাজারো রমণীর দেশাত্মবোধক গান। ছোট থেকে বড়, কিশোর থেকে দাদু বাদ যায়নি কেউ। বলতে গেলে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এটাই সবচেয়ে বড় বিজয়ের মেলা।
আয়োজকরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন একটা সেরা বিজয়ের মেলা উপহার দিতে। দর্শকদের একজন রকডেলের মধ্যবয়সী তরুণ পারভেজ মজুমদার। তিনি জানান, মেলায় অংশ নিতে এক মাস আগে চাকরি থেকে ছুটি নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘দেশে অনেক বছর যাই না। তবে আজকে মনে হলো সত্যি একটি বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছি। জাতীয় সংগীতে আমার মতো অনেক বাংলাদেশি আজকে চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছেন।’
মেলায় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই প্রজন্মের তরুণরা। তাঁদের চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। দিনব্যাপী বিজয়মেলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
বিজয়মেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি জাহিদ দীপ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্টারবেরির মেয়র ও ক্যাম্পাস পুলিশ কমিশনার।
সংগঠনের পক্ষে শিবলী আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি একটুকরো বাংলাদেশকে তুলে ধরতে, নতুন প্রজন্মের মাঝে ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে। মনে হয় কিছুটা হলেও সফল হয়েছি।’ সিডনি ছাড়াও মেলবোর্ন-ক্যানবেরার দর্শক ছিল চোখে পড়ার মতো।