চাকরির মূল্য সাত লাখ, বেতন ১৫ হাজার টাকা
কুয়েতের লুলু হাইপার মার্কেট। এক ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত একটি প্রতীকী ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। ব্যক্তির নাম মহসিন। বাড়ি নড়াইলে। ছয় মাস আগে ছয় লাখ টাকা খরচ করে একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে কাজ নিয়ে কুয়েতে আসেন।
ওই প্রতিষ্ঠানে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে মাসে বেতন পান ৬০ দিনার; বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। দেশে দেনা করে এসেছেন। লক্ষ্য, প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা দেশে পাঠানো।
আর এ কারণে মার্কেটের সামনে খেলনা গাড়ি চালান মহসিন। ওই কাজে যাতায়াত খরচসহ মাসে পান ১৩০ দিনার, বাংলাদেশি ৩২ হাজার টাকার কিছু বেশি।
মহসিন জানান, তাঁরা এক সঙ্গে ১২ জন নতুন ভিসায় কুয়েতে আসেন। কয়েকজন মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকলেও বেশির ভাগের অবস্থা করুণ।
গত দুই বছরে ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নতুন ভিসায় কুয়েতে এসেছেন। প্রথম অবস্থায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে এলেও বর্তমানে খরচ সাত লাখের বেশি দাঁড়িয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে বাধা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এবং কুয়েতে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সহযোগিতায় কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাত বদলের পালায় পড়ে ভিসার মূল্য এখন আকাশচুম্বী হতে যাচ্ছে। রাতারাতি বড় হওয়ার আশায় কিছু প্রবাসী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। তাদের অনেকেই জানে না কোন প্রতিষ্ঠানের ভিসা বের হচ্ছে, কোথায় বা কী কাজ্, বেতন কত। সঠিক তথ্য না জেনে পরিচিত বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও টাকা সংগ্রহ করে জমা দিচ্ছেন আরেকজনের কাছে। এই চক্রাকারে অনেক মধ্যস্থতাকারী ও সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কুয়েতে শ্রম আইনে একজন শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করে। সপ্তাহে একদিন ছুটি পায়। ওভার টাইম করলে প্রতি ঘণ্টায় সোয়া এক ঘণ্টার হিসাবে পারিশ্রমিক দেওয়ার নিয়ম। কুয়েত সরকার প্রতিষ্ঠানের মালিকদের যেমন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তেমনি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক আদায়ে অনেক কঠোর। কুয়েতের আইনে ভিসা বেচাকেনা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
সাত লাখ টাকায় ভিসা কিনে মাসিক ৬০ দিনার বেতনে কত বছর কাজ করলে টাকা পরিশোধ করা সম্ভব? কোনো প্রলোভনে পড়ে নয় কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন ৬০ দিনার সেই হিসাব করেই যাওয়ার কথা চিন্তা করা উচিত। মহসিন ভাগ্যবান বলে অন্য কাজ পেয়েছেন। কিন্তু তা সবার ক্ষেত্রে হয় না। তা ছাড়া কুয়েতের আইনে নিজ মালিক ব্যতীত অন্য কোথাও কাজ করা দণ্ডনীয় অপরাধ, সে ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তিকে কুয়েত ত্যাগ করতে হতে পারে।